ডেস্ক রিপোর্ট ।।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের পর ডলার দুর্বল হতে শুরু করেছে। বিশ্ববাজারে ডলারের মান কয়েক মাস ধরেই কমছে।
গত সপ্তাহের (১৮ এপ্রিল) শেষে ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান ছিল ৯৯.২৩, যেখানে জানুয়ারিতে ছিল ১১০। অর্থাৎ জানুয়ারির পর থেকে ডলারের মান কমেছে ৯.৩১ শতাংশ। ১১ এপ্রিল সূচক ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পর প্রথমবার ১০০-র নিচে নেমে যায়। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান)
শুধু এপ্রিলের শুরু থেকেই ইউরো, পাউন্ডের বিপরীতে ডলারের দর কমেছে ৫ শতাংশ এবং ইয়েনের বিপরীতে ৬ শতাংশ। ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ডলার দ্রুত শক্তি হারিয়েছে।
বাংলাদেশে ডলারের দাম এখনো প্রায় অপরিবর্তিত, কারণ মুদ্রাবাজার পুরোপুরি বাজারনির্ভর নয়। তবে বিশ্ববাজারের দরপতনের প্রভাব এখানকার বাজারে দেখা যায়নি।
ভারতের বাজারেও ডলারের দরপতন ঘটেছে, যদিও কিছুদিন আগেও উল্টো রুপির দর পড়ছিল। গত সপ্তাহে ভারতের বাজারে ডলারের দর টানা কমেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডলার বিক্রির প্রবণতা বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারে বিনিয়োগ কমার অর্থ মার্কিন অর্থনীতির ওপর আস্থা কমে যাওয়া। একই কারণে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের চাহিদাও কমেছে, ফলে সুদহার বাড়াতে হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই পরিস্থিতির চাপে ট্রাম্প শুল্ক স্থগিত করেছেন।
ডলার বরাবরই বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত বিনিয়োগ মাধ্যম। বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হলে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা ডলার বা সোনার দিকে ঝুঁকেন। অথচ এখন ডলার থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা।
ট্রাম্প প্রথমে ভেবেছিলেন, শুল্কের ফলে শেয়ারবাজারে ধাক্কা আসবে, কিন্তু কর হ্রাসের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। বাস্তবে হয়েছে উল্টো—শুল্কের কারণে মন্দার শঙ্কা বাড়ছে, মার্কিন বন্ডের চাহিদা কমছে।
বিশ্ববাণিজ্য ও সামগ্রিক লেনদেনে ডলারের ভূমিকা কমতে শুরু করেছে। বিনিয়োগ কমায় ডলারের বিনিময় হারও কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ পরিবর্তন গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের অর্থনীতিবিদ বেন স্টিলসহ বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের ওপর আস্থা কমে গেলে আমেরিকার অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে, যার প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়বে।
ইতিমধ্যে জেপি মরগান ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য কমলে ডলারের চাহিদা আরও কমবে, এতে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা আছে।
এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফটও পুরোনো হয়ে পড়ছে। ডিজিটাল মুদ্রা চালু হলে সুইফট ছাড়াই দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি লেনদেন সম্ভব হবে। মার্কিন টেক বিশেষজ্ঞ জেফ্রি স্যাক্সের মতে, ট্রাম্পের নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের অবসান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। (সূত্র: এনডিটিভি)
চীন ইতিমধ্যে ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইউয়ানে বাণিজ্যের চেষ্টা করছে। ভারতসহ আরও অনেক দেশ ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়। ফলে এখনই বিকল্প মুদ্রার উত্থান না হলেও, ভবিষ্যতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা বদলে যেতে পারে।