প্রোফাইল ডেস্ক ।।
ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস একজন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, যিনি গবেষণা, একাডেমিয়া ও প্রশাসনে ১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। প্রতিভা বিকাশ ও মেন্টরশিপে তার অসাধারণ সাফল্য তাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টিতে নিবেদিত করে তুলেছে। তিনি নীতিনির্ধারণ, মূল্যায়ন এবং আচরণগত বিশ্লেষণে দক্ষ; মিশ্র-উপায় গবেষণায় পারদর্শী। তার গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র হলো করপোরেট গভর্ন্যান্স, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিবেশগত, সামাজিক ও প্রশাসনিক (ESG) ইস্যু।
ড. সায়মা ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে যোগ দেন। সেখানে তিনি শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, নীতি প্রণয়ন ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, যা বিভাগের ভিত্তি গঠনে সহায়ক হয়।
২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে বিভাগটি ছাত্রছাত্রী, কর্পোরেট অংশীদার ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। তিনি বিভাগের মধ্যে মেধানির্ভর ও ফলাফলভিত্তিক সংস্কৃতি গড়ে তোলেন, যেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়।
২০১৬ সালে তিনি ইভিনিং এমবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক হন এবং ২০২১ সালে মাস্টার্স প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নেতৃত্বদানকালে তিনি বিশেষভাবে নারীর উন্নয়ন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্ব দেন। তার দুইটি উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়:
১. ফ্যাকাল্টি এলাকায় একটি ডে-কেয়ার প্রতিষ্ঠা, যা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকরা ব্যবহার করছেন।
২. ৮ মার্চ, ২০১৪ সালে ‘জাগো বনি শিখা’ নামে এক সচেতনতামূলক কর্মসূচির সূচনা, যা এখন ব্যবসায় অনুষদের একটি ঐতিহ্য, নারীর অধিকার ও সংগ্রাম তুলে ধরতে।
ড. সায়মা কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করে যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল করপোরেট গভর্ন্যান্স। তিনি সেখানে Cadbury Research Committee-এর সদস্য ছিলেন, যা তাকে বৈশ্বিক করপোরেট দুর্নীতি বিশ্লেষণ ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে সহায়ক কৌশল গঠনের অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।
২০১০ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম থেকে Social Science Research-এ ডিপ্লোমা অর্জন করেন। তার এমবিএ (স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট) ডিগ্রি ২০০১ সালে এবং বিবিএ ডিগ্রি ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ থেকে অর্জিত। তার ব্যাচেলর পর্যায়ে অসাধারণ ফলাফলের জন্য গোল্ড মেডেল লাভ করেন।
তার গবেষণায় করপোরেট গভর্ন্যান্স, বোর্ড বৈচিত্র্য, প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা, ডিসক্লোজার প্র্যাকটিস, ফ্যামিলি ফার্ম ও ESG অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত তার বহু গবেষণাপত্র ‘বেস্ট পেপার’ পুরস্কার লাভ করেছে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করপোরেট গভর্ন্যান্স নিয়ে কেস-ভিত্তিক একটি বই রচনায় নিয়োজিত।
তিনি বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির সেন্টার অব এক্সিলেন্স-এ ২০১৫-২০১৮ সাল পর্যন্ত গবেষণা কমিটির প্রধান ছিলেন। এছাড়াও তিনি সিটি ব্যাংক লিমিটেড-এর ইথিক্যাল কমিটির বহিঃস্থ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি-তে অতিথি অধ্যাপক হিসেবেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
ড. সায়মা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু সেমিনার ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে তিনি নিজের গবেষণা উপস্থাপন করেছেন। উল্লেখযোগ্য কিছু আয়োজন:
- Oxford Symposium on Women Leadership – ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য
- British Accounting and Finance Association Conference – ব্রাইটন, যুক্তরাজ্য
- Global Accounting and Organizational Change Conference (GAOC) – মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া
- International Conference on Corporate Governance – বার্মিংহাম
- National Symposium on Change Management – জাবালপুর, ভারত
- International Colloquium on Business & Management – থাইল্যান্ড
পেশাগত উন্নয়নের জন্য তিনি অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণে, যার মধ্যে রয়েছে:
- IFC ও Global Corporate Governance Forum আয়োজিত Board Leadership Training of Trainers
- University of Oxford-এর Research Methods Workshop
- Birmingham Business School-এর Project Management, Diversity Support, Case Study ও Presentation Skills বিষয়ক প্রশিক্ষণ
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ISRT কর্তৃক পরিচালিত SPSS ও Applied Statistics বিষয়ক প্রশিক্ষণ
- Bangladesh Enterprise Institute ও AMDIB আয়োজিত Corporate Governance বিষয়ক কর্মশালা ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ
ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস কুমিল্লা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির রাজনীতিক মনিরুল হক চৌধরীর তৃতীয় কন্যা । মনিরুল হক চৌধুরী ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি জাতীয় পার্টি হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক তিনি। ১৯৮৮ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়নে কুমিল্লা-৯ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কুমিল্লা-১০ আসনের প্রার্থী ছিলেন তিনি। সর্বশেষ নির্বাচনে মনিরুল হক চৌধুরী কারাগারে থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, চৌধুরী সায়মা চৌধুরী পিতার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন।