মঙ্গলবার, আগস্ট ১২, ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলাস্কা হতে পারে পরিবর্তনের মঞ্চ, বসছেন পুতিন-ট্রাম্প

by ঢাকাবার্তা
ভ্রাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

আগামী শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। এত বিশাল জায়গার মধ্যে কেন ট্রাম্প আলাস্কাকে বৈঠকের স্থান হিসেবে বেছে নিলেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-তর্ক চলছে।

আলাস্কা একসময় রাশিয়ার অংশ ছিল। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া এটি যুক্তরাষ্ট্রকে বিক্রি করে দেয়। এখান থেকে রাশিয়ার পূর্বতম অঞ্চল দূরে নয়, মাঝখানে শুধু বেরিং প্রণালি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার দেড় শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও রাশিয়ার প্রভাব এখানে এখনো আছে।

কিন্তু শুধু ইতিহাস নয়, এখানে রয়েছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশও। এই বৈঠক থেকে দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ট্রাম্প হয়তো এই সম্মেলনে তাঁদের সঙ্গে মনোযোগ ভাগাভাগি করতে চান না, কারণ তাদের অংশগ্রহণ শীর্ষ বৈঠকের মনোভাব ও অগ্রাধিকার পাল্টে দিতে পারে।

আলাস্কা জনবহুল নয়, তাই নিরাপত্তা ঝুঁকি কম। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা পুতিন এখানে আইসিসি সদস্য দেশগুলোতে গেলে গ্রেপ্তারির ভয় এড়াতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়, তাই এই জায়গাটি নিরাপদ।

ট্রাম্প প্রশাসন আলাস্কাকে ব্যবহার করে কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন প্রভাবের আওতায় রাখতে চায়। তাই আলাস্কা এখন উত্তরের কৌশলগত মঞ্চে পরিণত হচ্ছে।

আলাস্কার ভৌগোলিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র আর্কটিক অঞ্চল, যা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের মিলনের জায়গা। বেরিং প্রণালি দিয়ে উত্তর সমুদ্রপথের উন্নয়ন এবং সাগরের তলদেশে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আলাস্কার একটি দৃষ্টান্ত হলো লোমোনোসভ রিজ, যা রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্প্রসারণ হিসেবে দাবি করে। এখানে যৌথ আর্কটিক প্রকল্প বিশ্বজুড়ে সমৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, যদিও অন্যদিকে এটি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা ও প্রতিরক্ষা মহড়ার ক্ষেত্রও হতে পারে।

ভূখণ্ডের মালিকানা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণে বদলাতে পারে, এবং আলাস্কার ইতিহাস সেই ব্যাপারে চমকপ্রদ উদাহরণ। ট্রাম্প নিজেও বৈঠকের সময় ও স্থান ঘোষণা করে এই বিতর্ক উসকে দিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার মঙ্গলের জন্য কিছু এলাকা অদলবদল হতে পারে।’ রাশিয়ার দাবির মধ্যে রয়েছে যেসব অঞ্চল দখল করেছে সেগুলো কিয়েভের কাছে না রেখে মস্কোর কাছে দেয়া। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এটিকে মস্কোর কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছেন।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটি কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নিজের ভূখণ্ড নিয়ে কোনো আপস বা অদলবদল হবে না। ইউক্রেনীয়রা দখলদারদের নিজেদের ভূমি ‘উপহার’ দিতে রাজি নয়।

জেলেনস্কি ১৫ আগস্টের বৈঠকে অংশ নেবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net