স্টাফ রিপোর্টার ।।
জনতা ব্যাংকের এননটেক্স গ্রুপকে অতিমূল্যায়িত বন্ধক সম্পত্তির ভিত্তিতে ২৯৭ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে জালিয়াতি ও আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এবং সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন এই মামলা করেন।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, মিথ্যা নথিপত্র তৈরি ও জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই অপরাধ সংঘটিত হয়।
মামলায় উঠে আসে, এননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি চক্র ব্যাংকে জমি বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করে, অথচ ওই জমিতে কোনো স্থাপনা ছিল না। মাত্র ৩ কোটি ৪ লাখ টাকায় কেনা জমিকে ১৬৪ কোটি টাকায় মূল্যায়ন করা হয়। এই অতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২৯৭ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন, বিতরণ ও আত্মসাৎ করা হয়।
মামলায় আসামি করা হয়েছে জনতা ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ, উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, ব্যবস্থাপক গোলাম আজম, নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান, এসইও এমদাদুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার, মহাব্যবস্থাপক ও ডিএমডি গোলাম ফারুক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসানকে।
তালিকায় রয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ ও নিতাই চন্দ্র নাথও, যারা জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ।
মামলায় বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান সুপ্রভ স্পিনিংয়ের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জেনেও ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ অনুমোদনে সহায়তা করেন। মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, নাম-ঠিকানাহীন আরও কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পরিচয় দেয়নি, তবে তদন্তে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন। দুজনই সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন করেন। এবারই প্রথম তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হলো।