ডেস্ক রিপোর্ট ।।
২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান মনসুর দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী অভিজাতদের বিদেশে পাচার করা বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে তৎপর হয়েছেন। ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে গত এক দশকে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে একটি পরিবারই ১৫ বিলিয়ন ডলার সরিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি বিশেষ দল গঠন করেছে এই অর্থের খোঁজে। আহসান মনসুর, যিনি আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ এবং সরকার পতনের পর গভর্নর নিযুক্ত হন, বলেন, “সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত না পাওয়া গেলে এই সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” তিনি যুক্তরাজ্যকে প্রথম লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যেখানে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর ও লন্ডনের আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই তদন্তের অন্যতম লক্ষ্য। আল জাজিরার তদন্ত ইউনিট জানিয়েছে, তার মালিকানায় লন্ডন ও দুবাইয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি রয়েছে। তার পরিবার যুক্তরাজ্যে ৩৬০টির বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তার ৪০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে চৌধুরী দাবি করেছেন, তার সম্পদ বৈধ এবং এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
মনসুর বলেন, যুক্তরাজ্যে পাচারকারীদের সহায়তাকারী আইনজীবী, ব্যাংকার ও এস্টেট এজেন্টদেরও তদন্ত করা উচিত। তিনি এই অর্থ ফেরত আনতে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রমাণের বিনিময়ে জড়িতদের ক্ষমা বা চুক্তির প্রস্তাব বিবেচনা করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনের পর ইউএসএআইডি’র তহবিল বন্ধ হওয়ায় তদন্তে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
মনসুর জানান, “আমাদের লক্ষ্য বিশ্বে এই বার্তা দেওয়া যে যুক্তরাজ্য চুরি করা সম্পদের পছন্দের গন্তব্য, এবং বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি।” তিনি এই অর্থ উদ্ধারকে একটি নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন।