ডেস্ক রিপোর্ট ।।
বিশ্ববিখ্যাত আধ্যাত্মিক নেতা, দানবীর এবং ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা প্রিন্স করিম আগা খান ৮৮ বছর বয়সে পরলোক গমন করেছেন। তাঁর দাতব্য সংস্থা আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (AKDN) এক বিবৃতিতে এই মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছে।
প্রিন্স করিম আগা খান ছিলেন শিয়া ইসলামের ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ৪৯তম ইমাম। তিনি ১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তাঁর দাদার স্থলাভিষিক্ত হন। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পর্তুগালের লিসবনে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পাকিস্তানের করাচিতে আগা খান ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা, হার্ভার্ড ও এমআইটির যৌথ উদ্যোগে আগা খান প্রোগ্রাম ফর ইসলামিক আর্কিটেকচার চালু, এবং ভারতের হুমায়ুনের সমাধির সংস্কারকাজে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।
আগা খান সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ফ্রান্সের এক প্রাসাদে বসবাস করতেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইউরোপের অন্যতম সফল ঘোড়া প্রজননকারী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত ঘোড়া শেরগার ১৯৮১ সালে এপসম ডার্বি জয় করেছিল, তবে ১৯৮৩ সালে এটি অপহৃত হয় এবং আর কখনোই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

আগা খান
রাজনীতি ও সমাজকল্যাণের বাইরেও তিনি ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। রাজা চার্লস তৃতীয় ও প্রয়াত রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয়ের ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে রাজা চার্লস গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আগা খানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১.৫ কোটি ইসমাইলি মুসলমানের জন্য আগা খানের মৃত্যু এক বিশাল ক্ষতি। পাকিস্তানে বসবাসরত প্রায় ৫ লাখ ইসমাইলি মুসলমানের ধর্মীয় নেতা হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দানশীলতা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে।
আগা খানের জীবন ও কর্মকাণ্ড বিশ্ব ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি শুধু ইসমাইলি সম্প্রদায়ের জন্য নন, বরং দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে এক মহান দানবীর হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।