স্পোর্টস ডেস্ক ।।
অস্ট্রেলিয়ান তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের খবর যখন দুপুরে আলোড়ন তোলে, তখন হয়তো কেউ ভাবেননি—দিনের শেষ আলো ফুরোতেই আরও বড় চমক অপেক্ষা করে আছে। বিকেলে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্ফোরক উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হেইনরিখ ক্লাসেন ঘোষণা দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর।
৩৩ বছর বয়সে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক চিন্তা-ভাবনাই মুখ্য ছিল বলে জানিয়েছেন ক্লাসেন। নিজের বিদায়ী বার্তায় তিনি লেখেন,
“আজ আমার জন্য দুঃখের দিন। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছি। আমার এবং পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য কী ভালো হবে, সেটা বুঝতে অনেক সময় নিয়েছি। সিদ্ধান্তটি কঠিন ছিল, তবে মানসিকভাবে আমি এখন শান্ত।”
সাত বছরের উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি
২০১৮ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল হেইনরিখ ক্লাসেনের। তিন সংস্করণ মিলিয়ে খেলেছেন ১২২টি ম্যাচ, করেছেন ৩২৪৫ রান। এর মধ্যে ৬০টি ওয়ানডে ম্যাচে তার সংগ্রহ ২১৪১ রান, গড় ৪৩.৬৯ ও স্ট্রাইক রেট ১১৭.০৫। আছে ৪টি সেঞ্চুরি ও ১১টি ফিফটি। টি-টোয়েন্টিতে ৫৮ ম্যাচে করেছেন ১০০০ রান (গড় ২৩.২৫, স্ট্রাইক রেট ১৪১.৮৪)। তবে টেস্টে (৪ ম্যাচ) ক্লাসেন সেভাবে সফল হতে পারেননি।

হেইনরিখ ক্লাসেন
হালাকু খ্যাত ক্লাসেনের ব্যাটিং দাপট
বিশ্ব ক্রিকেট ক্লাসেনকে চিনেছে মূলত সাদা বলের রাজপুত্র হিসেবে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ক্লাসেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে তুলেছেন সেমিফাইনালে, আর ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলকে পৌঁছে দেন ফাইনালে। ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৩.২১, রান করেছিলেন ৩৭৩ (গড় ৪১.৪৪)। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তার ৬৭ বলে ১০৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস ‘ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক’ হিসেবে পরিচিতি পায়। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা তাকে তাই ডাক দিয়েছিলেন ‘হালাকু খান’ নামে।
২০২৪ সালে আইপিএলেও ক্লাসেন ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ১৭২.৬৯ স্ট্রাইক রেটে ৪৮৭ রান করেছেন, গড় ৪৪.২৭। কলকাতার বিপক্ষে ১০৫ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন মাত্র ৩৭ বলে, যা আইপিএল ইতিহাসের তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি।

হেইনরিখ ক্লাসেন
চুক্তির বাইরে থেকে অভিমানে বিদায়?
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে টেস্ট থেকে অবসর নেন ক্লাসেন। ধারণা করা হয়েছিল, তিনি টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতে আরও বছর দুই আন্তর্জাতিক মঞ্চ মাতাবেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড (সিএসএ) চলতি বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকায় ক্লাসেনের নাম রাখেনি। ক্রিকেট মহলের অনেকে মনে করছেন, হয়তো এই অবহেলা ও অভিমানই শেষ পর্যন্ত তাকে জাতীয় দল থেকে বিদায় নিতে বাধ্য করেছে।

আইপিএলে ক্লাসেন
বিদায়ের মুহূর্তে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা
নিজের বিদায়ী বার্তায় জাতীয় দলের হয়ে খেলার গৌরব ও স্মৃতি তুলে ধরে ক্লাসেন বলেন,
“দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গৌরব। ছোটবেলা থেকে আমি এই স্বপ্নই দেখতাম। আমি অসাধারণ কিছু বন্ধুত্ব পেয়েছি, যেগুলো আমি সারাজীবন ধরে রাখব। এখন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে চাই।”
শেষ কথা
মাত্র সাত বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। কিন্তু এই সময়েই হেইনরিখ ক্লাসেন নিজের জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সাদা বলের ব্যাটারদের তালিকায়। তার আগ্রাসী স্টাইল, ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং এবং নির্ভরযোগ্য উইকেটরক্ষণের জন্য আজীবন মনে রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়া ভক্তরা হয়তো বলতেই পারেন—“ক্লাসেন, তোমাকে মিস করব!”