ঢাকাবার্তা ডেস্ক ।।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান তাঁর সমর্থকদের অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে আবারও প্রমাণ করেছেন যে তিনি দেশের গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় আপসহীন। গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইমরান খান ঘোষণা দেন, আগামী ১৩ ডিসেম্বর পেশোয়ারে পিটিআইয়ের এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
ইমরানের ডাক: অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি
ইমরান খানের এই ডাক এমন এক সময়ে এসেছে, যখন পাকিস্তান ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটে জর্জরিত। পিটিআইয়ের সাম্প্রতিক ইসলামাবাদ সমাবেশে অন্তত ১২ জন নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া, গত বছরের ৯ মের ঘটনা, যেখানে দেশজুড়ে সহিংসতার সময় ৮ জন নিহত হয়েছিল, এখনও একটি বড় ক্ষত হিসেবে রয়ে গেছে।
ইমরান খান সরাসরি দাবি করেছেন, এসব সহিংসতার ন্যায়বিচার করতে হবে। তিনি পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করার জন্য। একই সঙ্গে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মুক্তি নিশ্চিত করার দাবি করেছেন তিনি।
ইমরানের দৃঢ় অবস্থান
ইমরান খান সতর্ক করে বলেছেন, “যদি এই দুই দাবি পূরণ না করা হয়, তবে ১৪ ডিসেম্বর থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে।” তিনি আরও জানান, আন্দোলনের পরিণতি যা-ই হোক, তার সম্পূর্ণ দায়ভার বর্তমান সরকারের।
ইমরানের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ কিন্তু শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনায় আছেন। তিনি নিজেকে একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দাঁড় করাতে চান।
সরকারের পাল্টা অবস্থান
পাকিস্তান সরকার অবশ্য এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ২৫ নভেম্বরের সমাবেশে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। বরং তারা ইমরানের দলকে সামরিক স্থাপনায় হামলার জন্য দায়ী করছে।
তবে ইমরান খান একের পর এক মামলার শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিকতম একটি মামলায়ও তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, এগুলো রাজনৈতিক হয়রানির অংশ।
ইমরান খানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা
২০১৮ সালে ইমরান খান যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখন তিনি একটি নতুন পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি ছিল তাঁর অঙ্গীকার। যদিও ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে হেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা এতটুকুও কমেনি।
শেষ কথা
ইমরান খানের নেতৃত্বে পিটিআই পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। তাঁর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক নিছক একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ নয়, বরং এটি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায্য এবং গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের দাবি। ইমরান খান আবারও প্রমাণ করেছেন যে তিনি একজন আপসহীন নেতা, যিনি জনগণের অধিকার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত।