স্টাফ রিপোর্টার ।।
সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে, উপদেষ্টারা না আসায় দিন পেরিয়ে রাতেও সড়কে অবস্থান করছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর তাঁরা বিছানাপত্র নিয়ে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে বসে থাকার ঘোষণা দেন। কেউ এক পা হারিয়েছেন, কেউ হুইলচেয়ারে, আবার কারও চোখে ব্যান্ডেজ – এভাবেই তাঁরা সড়কে নিজেদের দাবি তুলে ধরছেন।
ঘটনার শুরু এবং আন্দোলনের দাবিগুলি
আহতদের আন্দোলন শুরু হয় দুপুর ১টার দিকে, পঙ্গু হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা দিনভর বিক্ষোভ করেন। রাত ১২টার দিকে দ্বিতীয়বার ঘটনাস্থলে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ (Hasnat Abdullah)। তিনি জানান, যাদের আসার দাবি করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে দুজন ঢাকার বাইরে, একজন বিদেশে এবং অন্যজন ক্যানসার আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীকে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। তবে, আহত ব্যক্তিরা জানান, তাঁদের দাবিতে উপদেষ্টাদের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস প্রয়োজন।
বিক্ষুব্ধদের বক্তব্য এবং দাবি
বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে সালমান নামের একজন বলেন, “আমরা হাসনাত ভাইয়ের সঙ্গে একমত। কাল উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব।” তিনি ঘোষণা দেন যে, তাঁরা বিছানাপত্র নিয়ে সড়কেই অবস্থান করবেন। সেইসঙ্গে সালমান সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সরকার যেভাবে আমাদের সঙ্গে তামাশা করছে, এতে এদের সরাতে আমাদের সময় লাগবে না।”
বিক্ষোভের পেছনের কারণ এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত
বিক্ষোভের সূচনা হয় পঙ্গু হাসপাতালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের (Nurjahan Begum) পরিদর্শন থেকে। অভ্যুত্থানে আহতদের খোঁজ নিতে তিনি ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের (Sarah Cooke) সঙ্গে হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। তবে তিনি সব আহতের সঙ্গে দেখা করেননি—এ অভিযোগে আহতরা তাঁর গাড়ির পথ আটকে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে উপদেষ্টা অন্য গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে আহত ব্যক্তিরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের আগারগাঁও-শ্যামলী সড়কে অবস্থান নেন।
আহতদের সড়কে অবস্থান নেয়ার পর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এসে আন্দোলনে যোগ দেন, ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ
আহত মো. মাসুম হুইলচেয়ারে বসে জানান, উপদেষ্টা তাঁদের দেখতে যাননি এবং তিন মাস পর হাসপাতালে এসেও তাঁদের উপেক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন।” আল মিরাজ নামের আরেক আহত ছাত্র জানান, গুলিতে তাঁর ডান চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশের বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবিও জানান।
সেনা ও পুলিশের উপস্থিতি এবং আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ
বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আন্দোলনকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাঁদের অবস্থানে অটল থাকেন। আহতরা জানান, উপদেষ্টাদের দেখা না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাস্তা ছাড়বেন না।