ক্রিকইনফো ।।
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গগনবিদারী সমর্থন, রোমাঞ্চকর উত্থান-পতন, আর শেষ দৃশ্যে স্থানীয় এক বীরের নিরব বিস্ফোরণ—রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস (ডিসি) ম্যাচটি ছিল যেন নাটকীয়তার পূর্ণ প্যাকেজ। ম্যাচের প্রথম ভাগে ব্যাট হাতে দারুণ শুরু করেছিল আরসিবি। প্রথম ৩ ওভারে স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে ৫৩ রান কোনো উইকেট না হারিয়ে। শেষের ২ ওভারেও যোগ হয় ৩৬ রান বিনা উইকেটে। কিন্তু এই দুটি ঝলক ছাড়া মাঝের ১৫ ওভারে তাদের ইনিংস ছিল যেন বিভ্রান্তির প্রতিচ্ছবি—মোটে ৭৪ রান, আর হারাতে হয় ৭টি উইকেট। ইনিংস শেষে স্কোর দাঁড়ায় ১৬৩/৭।
লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে দিল্লির শুরুটাও মসৃণ ছিল না। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই তারা হারায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ১১ ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ৬৭/৪, তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রায় ১১ রান করে ওভারে। সেই সময় পর্যন্ত ম্যাচে আরসিবিই এগিয়ে। চিন্নাস্বামীর গ্যালারি তখন উত্তাল, সমর্থকদের কণ্ঠে ফিরে আসে জয়ের প্রত্যাশা।
ঠিক এই মুহূর্তে ম্যাচের রাশ হাতে নেন কেএল রাহুল। সঙ্গে ছিলেন ট্রিস্টান স্টাবস। ধীরে ধীরে রাহুল ছন্দে ফিরতে থাকেন, আর স্টাবসও যোগ দেন আগ্রাসনে। দুজন মিলে মাত্র ৬.৫ ওভারে যোগ করেন ১০২ রান। পঞ্চম উইকেটে তাদের জুটি থেকে আসে ১১১ রান। ম্যাচ তখন কার্যত দিল্লির দখলে।
রাহুল ছিলেন অপরাজিত ৯৩ রানে, মাত্র ৫৩ বলে। তাঁর ইনিংস শুরু হয়েছিল মন্থর গতিতে—২৯ বলে ২৯ রান নিয়ে। এমনকি মাত্র ৭ রানে থাকার সময় পাটিদার একটি কঠিন ক্যাচও ছেড়ে দেন। কিন্তু সেই জীবন তিনি পুরোপুরি কাজে লাগান। ১১তম ওভারের পর ইএসপিএনক্রিকইনফোর মতে, দিল্লির জয়ের সম্ভাবনা ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ। সেখান থেকেই রাহুল দিলেন পাল্টা ধাক্কা। শুরুতে লিয়াম লিভিংস্টোন ও পরে জশ হ্যাজেলউডকে টার্গেট করেন তিনি। হ্যাজেলউডের এক ওভার থেকে আসে ২২ রান। সেই ওভারেই ম্যাচ ঘুরে যায় decisively।
স্টাবসও সময় বুঝে দায়িত্ব নেন। সুয়াশ শর্মার এক ওভারে চার ও ছয় মেরে চাপ মুক্ত করেন দলকে। শেষটা রাহুলেরই। ১৮তম ওভারে দুটি ছক্কা ও একটি চার মেরে ম্যাচ জেতান। জয় নিশ্চিত করার পর ব্যাট দিয়ে মাঠে একটি থাপ্পড় দেন রাহুল—নিজের উপস্থিতির জানান দেন যেন।
এটাই ছিল তাঁর হোম কামিং। বেঙ্গালুরুর সন্তান কেএল রাহুল প্রমাণ করলেন—এই মাঠ, এই শহর, তাঁর হৃদয়েরও ঠিকানা। আর ম্যাচের স্মৃতিতে যুক্ত হলো আরেকটি অনন্য অধ্যায়।