প্রোফাইল ডেস্ক ।।
১৯৭২ সালের নববর্ষে মাত্র ২৫০ টাকা হাতে নিয়ে সদ্য বিবাহিত তরুণ দম্পতি ঢাকায় এসে নোঙর ফেলেছিলেন রাজধানীর কলাবাগানে। দু’জনের একজন শিক্ষকতার মহৎ পেশায় যোগ দেন, আর অন্যজন—মোহাম্মদ লুৎফর রহমান—শুরু করেন জীবনরক্ষাকারী এক পেশা: ফার্মেসি ব্যবসা। সেই ছোট্ট দোকানের নামকরণ হয় তাঁর সন্তানদের নামে—মেয়ে লাইজু (লা) এবং ছেলে জয় (জ) মিলিয়ে “লাজফার্মা”।
লুৎফর রহমানের শৈশব কেটেছে যশোরে। স্বাধীনতার আগে বামপন্থি রাজনীতিতে জড়িয়ে জীবনের ঝুঁকিতে পড়েন। নিজের বাবাকে হত্যার নির্দেশ অমান্য করায় নকশাল সংগঠনের পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে যান ভারতে। দেশে ফিরে গোপনে বিবাহ, তারপর ঢাকায় কঠিন সংগ্রামের জীবন।
এক পর্যায়ে একজন দয়ালু ডাক্তারের সহায়তায় প্রথম ফার্মেসিতে কাজের সুযোগ পান। সেখান থেকেই শুরু ঔষধ বিক্রেতা হিসেবে তাঁর বাস্তব যাত্রা। কিছু সঞ্চয় হলে তিনি ১৯৭২ সালেই প্রতিষ্ঠা করেন লাজফার্মা—যা আজ দেশের অন্যতম বিশ্বস্ত ফার্মেসি চেইন।

লাজফার্মার সামনে প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান
শুরুর দিনেই লুৎফর রহমান লক্ষ্য করেন—বাজারের একটি বড় অংশ ভেজাল, নিম্নমানের বা ভুল তাপমাত্রায় সংরক্ষিত ওষুধে পরিপূর্ণ। তিনি সিদ্ধান্ত নেন নকল–ভেজালের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
কিন্তু এই পথ সহজ ছিল না—
- চাঁদাবাজ
- নকলবাজ
- দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের রক্তচক্ষু
- হলুদ সাংবাদিকতার অপপ্রচার
সবকিছু সত্ত্বেও লাজফার্মা নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি। আজও এই প্রতিষ্ঠান নকল–ভেজালমুক্ত ও মানসম্মত ওষুধ সরবরাহের অটল সংগ্রামে লড়ে যাচ্ছে।
১৯৯২ সালে তিনি দেশত্যাগ করেন কানাডায়। সেখানে ফার্মেসি চেইন Shoppers Drug Mart–এর উচ্চমান, ঠাণ্ডা পরিবেশ, পণ্যের সুশৃঙ্খল স্টোরেজ তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সেই অভিজ্ঞতা এবং স্বপ্ন নিয়ে তিনি ২০০২ সালে দেশে ফিরে আসেন ও লাজফার্মাকে আধুনিক চেইন ফার্মেসির আদলে রূপান্তর করেন।
আজ লাজফার্মার প্রতিটি শাখা:
- সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
- নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ
- গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট–নিয়ন্ত্রিত
- মানসম্মত, ভেজালমুক্ত ওষুধের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা
লুৎফর রহমানের গবেষণাভিত্তিক কাজ ও তাপমাত্রা–সচেতনতা নিয়ে লেখা ছোট ছোট বইও ফার্মেসিগুলোতে প্রচার করা হয়।
লাজফার্মার নাম ও লোগো ব্যবহার করে মডেল ফার্মেসি গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। তবে অনুমতি পান কেবল সৎ, মানবসেবায় বিশ্বাসী উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে—
- ৪টি কর্পোরেট শাখা
- ১২৭টি ফ্র্যাঞ্চাইজি শাখা
- দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত সম্প্রসারণ
- লক্ষ্য: ১,০০০ শাখা
আপনার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও লাজফার্মা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করে দেয়:
- সঠিক স্থান বাছাই
- ইন্টেরিয়র ডিজাইন অনুমোদন
- কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ
- সফটওয়্যার/সিসিটিভি স্থাপন
- ইনভেন্টরি সেটআপ
- ড্রাগ লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় সহায়তা
- ১৫ দিনের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ
- শাখা উদ্বোধন পর্যন্ত সমন্বয় ও পরিকল্পনা
শুধু পাঁচ বছরের জন্য ভ্যাটসহ মাত্র দুই মাসের লাভের সমপরিমাণ খরচ বহন করে আপনি হতে পারেন লাজফার্মা পরিবারের সদস্য।
মানসম্মত, নকল–ভেজালমুক্ত ও সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষিত ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই লাজফার্মার মিশন। প্রতিটি নাগরিককে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়াই লাজফার্মার অঙ্গীকার।
বাংলাদেশে ১,০০০+ মডেল ফার্মেসি গড়ে তুলে একটি বিশ্বমানের চেইন ফার্মেসিতে পরিণত হওয়া লাজফার্মার ভিশন।
লাজফার্মা যেসব মূল্যবোধে বিশ্বাসী—
- সততা
- মানবসেবা
- মান নিশ্চিতকরণ
- সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ
- পেশাগত দক্ষতা
- দায়িত্বশীলতা
- আধুনিকতা
- নৈতিকতা
মোহাম্মদ লুৎফর রহমান লাজফার্মার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একজন সংগ্রামী উদ্যোক্তা, গবেষক, লেখক। তার ২৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের ওষুধ নিরাপত্তা ও তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনার অগ্রদূত বলা হয়।
লাজফার্মার সকল প্রকার যোগাযোগ—
লাজ সেন্টার, ৬৩/সি লেক সার্কাস, পশ্চিম পান্থপথ, কলাবাগান, ঢাকা–১২০৫
Whatsapp: +8801817595066
Whatsapp: +8801819289320