বাসস ।।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, “সংবাদমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ। জনগণের আস্থা ফিরে পেতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে সত্য ও জবাবদিহির পক্ষে দাঁড়াতে হবে।”
আজ রোববার রাজধানীর তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিকদের পরিবার ও আহত এবং সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহফুজ আলম বলেন, “সংবাদমাধ্যম যদি স্বাধীনতা চায়, তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। যারা ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারের দালালি করেছে, তারা আজও ক্ষমা চায়নি। আমরা কোনো হাউজকে কিছু প্রচারে বাধ্য করিনি, কিন্তু গত ছয় মাসে অনেক গণমাধ্যম গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ও ঐক্য ভণ্ডুল করতে কাজ করেছে।”
তিনি আরও জানান, সরকার সংস্কার কমিশনের ১২ দফা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এর আওতায় সাংবাদিক সুরক্ষা আইন, নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, আহত সাংবাদিকদের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সম্প্রচার নীতিমালা ও অনলাইন নীতিমালাও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “কারফিউর সময় টেলিভিশন সাংবাদিকতা একপাক্ষিক ছিল। ‘পুড়ে গেছে সব’, ‘আগুন সন্ত্রাস’—এসব বারবার প্রচার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যা বলতেন, তাই রিলস করে দেখানো হতো। এই দৃষ্টিভঙ্গি সাংবাদিকতার জন্য হতাশাজনক।”
তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা, তবে তা এক–দুই বছরে অর্জন সম্ভব নয়। এই পথ চলা অব্যাহত থাকলে তবেই তা সফল হবে।”
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “আন্দোলনের সময় কিছু গণমাধ্যম ভালো কাজ করেছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাংবাদিকরাই ব্যক্তিগত সাহস দেখিয়েছেন। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, বরং সাংবাদিকদের ত্যাগই আন্দোলনের কৃতিত্বের দাবিদার।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের সুযোগ বারবার আসে না। বারবার মানুষ জীবন দিতে পারে না। প্রতি ২০ বছর পরপর রক্ত দেওয়ার কোনো মানে নেই।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ছিল বাংলাদেশের সাংবাদিকতার সেরা সময়, আবার সবচেয়ে ভয়াবহ সময়ও। একদিকে মেহেদী হাসান, তাহের জামান, আবু তাহের মো. তুরাব জীবন দিয়েছেন। অন্যদিকে, কিছু সাংবাদিক রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করেছেন—আপনি এখনো এদের শায়েস্তা করছেন না কেন, খুন করছেন না কেন? এমন ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসেই বিরল।”
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের একটি অংশ ক্ষমতার লোভে পথ হারিয়েছে। কিন্তু ফ্রন্টলাইনের সাংবাদিক, মফস্বলের রিপোর্টাররা তাদের জায়গা ছাড়েনি। এই বিপ্লব সফল হয়েছে তাদের জন্যই।”
সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “দেড় দশকের নিপীড়নের ক্ষোভ চব্বিশের জুলাই-আগস্টে বিস্ফোরিত হয়েছে। শুধু করুণ পতন নয়, এক স্বৈরশাসককে দেশ ছেড়ে পালাতেও হয়েছে। শহীদ সাংবাদিকদের আত্মত্যাগেই আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।”
অনুষ্ঠানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবার এবং আহত ও সাহসী ১৯২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৫৬ লাখ টাকা আর্থিক সম্মানিও বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শহীদ তাহের জামানের মা শামসি আরা জামান, সাংবাদিক তাওহীদুল হক সিয়াম এবং দ্য ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক ইমরান হোসেন।
উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম।