ঢাকাবার্তা : প্রথমেই আপনার সঙ্গীতশিল্পী হয়ে ওঠার গল্পটা শুনতে চাই
পৌলমী গাঙ্গুলী : ছেলেবেলা থেকে গান পাগল ছিলাম। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান বিষয়ে পড়েছি । আমার ইচ্ছে ছিলো গান নিয়ে কিছু করার। মা চাইতেন বিজ্ঞান নিয়েই পড়ি। শেষে বাবা আমাকে সায় দিলেন। এরপর থেকে গান নিয়েই আছি। এরপর তো গান নিয়ে পিএইচডি করেছি। আর পিএইচডি শেষ করে ভাবলাম মুম্বাইয়ে চলে আসি। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কিন্তু এখানে আসার পরেও পথটা মসৃণ ছিলো না। সহজেই কাজ পাইনি। বুঝতেই পারছেন লতা মুঙ্গেশকর এবং আশাদির শহর। এখানে তো ট্যালেন্টেরও অভাব নেই। পরে আস্তে আস্তে নিজেকে প্রমাণ করেছি। তাই সুযোগও পেয়েছি। এছাড়া মুম্বাইয়ে একটি মিউজিক স্কুল ‘সিম্ফনি মিউজিক স্কুল’ চালাচ্ছি। যেখানে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখানো হয়। স্কুলেও দারূণ সাড়া পাচ্ছি। আমার প্রথম এলবাম ‘প্রাণ চায়’ বের হবার আগে সব গানই ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে আমার শ্রোতারা বেশিরভাগই ১৮ থেকে ৩০ বছরের তরুণ শ্রোতা। তবে বাবা যদি প্রথম থেকে আমাকে উৎসাহ না দিতেন তবে কি জানেন তো সঙ্গীত শিল্পী হয়ে ওঠা হতো না।
ঢাকাবার্তা : আপনার নতুন কাজ ‘দুগ্গা দুগ্গা’ আইডিয়াটা কিভাবে আসলো। দূর্গার বদলে ‘দুগ্গা দুগ্গা’ কেন?
পৌলমী গাঙ্গুলী : এই গানটির আইডিয়া মূলত অভিজিৎ এর (অভিজিৎ মিশ্র) সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে অভিজিৎকে বললাম এই দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে শ্রোতাদের কোনো গান উপহার দেয়া যায় কিনা। অভিজতও বেশ আগ্রহ দেখালো। গানের হুক ‘দুগ্গা দুগ্গা’ তৈরি হয়ে গেলো সঙ্গে সঙ্গেই। কোরাসটা আমার ও অভিজিৎ এর দুজনেরই বেশ পছন্দ হলো। এরপরে লিরিক্সের কাজটি করা হলো। এখন কথা হলো কেন ‘দুগ্গা দুগ্গা’ কিন্তু ‘দূর্গা দূর্গা’ কেন নয়। এর উত্তরটা লুকিয়ে আছে আমার ছেলেবেলায়। তখন আমি প্রায়ই বাবাকে দেখতাম অফিসে বা বাহিরে কোথাও বের হবার আগে তিনি একবার হলেও ‘দুগ্গা দুগ্গা’ বলে বের হতেন। তো সেই ‘দুগ্গা’র স্মৃতিটাকে রোমাঞ্চিত করে এই গানটি তৈরি করা। নিজের স্মৃতি বা জীবনের ছোট একটি টুকরোকে নিয়ে গানটি করেছি। সেজন্য দর্শকদেরও গানটি বেশ ভালো লেগেছে। যারা গানটি শুনবেন তারা নিজেদের কোনো না কোনো স্মৃতির সঙ্গে রিলেট করতে পারবেন। গানটি গতকাল আমার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।
গানটি শুনুন : ‘দুগ্গা দুগ্গা’
ঢাকাবার্তা : এই গানটি তৈরি করতে গিয়ে কোনো মজার স্মৃতি আছে কি? শেয়ার করবেন?
পৌলমী গাঙ্গুলী : হ্যা। গানটির হুক তো করলাম আমি আর অভিজিৎদা মিলে। প্রলয়ও লিরিক্সের কাজটি দারুণভাবে সম্পন্ন করলো। পুরো গানটি সফলভাবে রেকর্ডও হলো। এখন রেকর্ডের পরে ভিডিওগ্রাফি তো করতে হবে। সেখানে আবার ডান্সও করতে হবে। বেশ কঠিন একটা হুক স্টেপও ছিলো। সেটা করতে গিয়ে তো আমার আর অভিজিৎদার ‘কাদাতে পানিতে ডুবোডুবি’ অবস্থা। খুব ভয়ে ছিলাম পারবো কি পারবোনা। কিন্তু অভিজিৎ আমাকে বেশ সাহস দিয়েছে। তাই করতে পেরেছিলাম। সত্যি বলতে সেটা খুব মজার এক্সপেরিয়েন্স ছিলো। কখনো এই মজার এক্সপেরিয়েন্সের কথা ভুলবো না।
মোত্তাকিন মুন : মুম্বাইয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা ও সফল সঙ্গীতশিল্পী হবার পেছনে কোনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন কি?
ঢাকাবার্তা : যখন আমি পিএইচডি শেষ করি, তখন কলকাতায়ও সেরকম কিছু করছিলাম না। চাকরি করছিলাম। সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে রিস্ক নিলাম যে মুম্বাই যাবো। সেখানেই গানের ক্যারিয়ার করবো। এখানে এসে তো প্রথমেই মনে হলো সমুদ্রে এসে পড়েছি। আশেপাশের সকলেই ট্যালেন্টেড শিল্পী। সবাই আশাদি ও লতাদি হতে চায়। মানে এই স্বপ্ন তো থাকে সবারই। আমারও ছিলো। সেজন্য নিজের ট্যালেন্টকেও ঝালাই করতে হয়েছে। নতুন শহরে পরিচিত হতে হয়েছে, সকলকে চিনতে হয়েছে। এক পা দুই পা করে এগোতে হয়েছে।
ঢাকাবার্তা : আপনি তো মুম্বাইয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতে ছাত্রদের দীক্ষা দিচ্ছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে উত্তর ভারত ও সমগ্র ভারতে এখন কেমন আগ্রহ দেখছেন?
পৌলমী গাঙ্গুলী : রবীন্দ্র সঙ্গীত আমরা যেটাকে বলি সেটা তো অন্যান্য গানের জনরার মতো নয়। এই গানের ভেতরে মনকে শান্ত করে দেয়ার একটা বিষয়, শুনতেও কিন্তু হয় হৃদয়কে শান্ত করে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের লিরিক্সগুলো। মন দিয়ে শুনতে হয়। বুঝতে হয়। তবেই আয়ত্ত্ব হয়। আমি তো আমার স্কুলে বেশ ভালোই আগ্রহ দেখছি। তবে সেজন্য লিরিক্সগুলোকে আমার ট্রান্সলেট (অনুবাদ) করে দিতে হয়। অনুবাদ করার পরে স্টুডেন্টরাই মূগ্ধ হয়ে যায়। এবং নিজেরাই আগ্রহ দেখায় রবীন্দ্র সঙ্গীত ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে জানার ও শেখার জন্য।
ঢাকাবার্তা : বাহ! আপনি তো রবীন্দ্রনাথের মশাল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। খুবই এক্সেপশনাল। ব্যক্তিগতভাবে আপনার প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী কে?
পৌলমী গাঙ্গুলী : বন্যাদি। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গান বেশি ভালো লাগে। হ্যা, সত্যিই বলেছেন রবীন্দ্র সঙ্গীতের মশাল ছড়িয়ে দিচ্ছি। এখন তো সবাই ভিডিওতে নাচ করা যায় এমন গান ও ভিডিও তৈরি করছে। আমিও হয়তো সেটা কখনো কখনো চেষ্টা করি। কিন্তু রবীন্দ্র সঙ্গীতের শিক্ষাটা তো আমার ভেতরে রয়ে গেছে। তাই ভিডিও বা ট্রেন্ডকে দেখে আমি গান করিনা। কিংবা উদ্দেশ্য সেটা থাকেনা। সেজন্য সকল সময় আমার চেষ্টা থাকে পিউর মিউজিকটা দর্শকদের উপহার দেয়ার। সেই উদ্দেশ্য থেকেই আমরা এবার পূজোয় ‘দুগ্গা দুগ্গা’ গানটি তৈরি করেছি।
মোত্তাকিন মুন : বেশ! আমরা চাই আপনি এভাবেই এগিয়ে যান। এবং আমাদেরকে এমন সুন্দর সুন্দর গান উপহার দিয়ে যান। সামনের দিনগুলোর জন্য রইলো বিশেষ শুভকামনা।
পৌলমী গাঙ্গুলী : ধন্যবাদ আপনাকেও। শ্রোতাদের এবার দূর্গাপূজার উৎসবে বেশ ভালো কিছুদিন কাটুক এটাই চাই।