স্টাফ রিপোর্টার ।।
সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ গঠনের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর সংসদে আলোচনা করেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত মতামত জমা দেয় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ এসময় সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান সংস্কার নিয়ে গণপরিষদের প্রয়োজনীয়তা বিএনপি দেখছে না।
তিনি আরও জানান, বিএনপি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশে একমত। তবে উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতি পরে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি। তবে সরাসরি ভোট নয়, বিদ্যমান পদ্ধতিতে মনোনয়নের পক্ষে তারা।
সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশ পরিবর্তনের সুপারিশের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনার বিষয়টি বিএনপি সমুচিত মনে করে না। প্রস্তাবনা আগের অবস্থায় রাখার পক্ষে তারা।
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনেরও বিরোধিতা করেছে বিএনপি। দলের মতে, দীর্ঘদিনের চর্চায় এ নাম জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে, সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব, যেটিতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের অধিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাও প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। বিএনপির মতে, রাষ্ট্রের মূল চেতনা হচ্ছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কয়েকটি সুপারিশের বিরোধিতাও করেছে বিএনপি। বিশেষ করে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার পক্ষে তারা। নির্বাচন কমিশনকে সংসদীয় কমিটির অধীনে দায়বদ্ধ করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধেও মত দিয়েছে দলটি। তাদের মতে, দায়বদ্ধতার বিষয়টি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।
সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কারে কমিশনের দেওয়া সুপারিশের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে একমত হয়েছে বিএনপি। দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১টিতে সরাসরি একমত, বাকিগুলোর ক্ষেত্রে নীতিগত মত দিয়েছে। বিচার বিভাগ সংস্কারের বেশিরভাগ সুপারিশেও বিএনপি সম্মত।
বিএনপির মতামত গ্রহণের সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার ও ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। ঈদের পর বিএনপির সঙ্গে কমিশনের বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি সনদ তৈরি করা হবে, যা ভবিষ্যৎ নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।