শুক্রবার, জুলাই ১৮, ২০২৫

পেহেলগাম: প্রকৃতির কোলে এক নৈসর্গিক লীলাভূমি

by ঢাকাবার্তা
পাহালগাম

সবজান্তা সমশের ।।

কাশ্মীর, যাকে প্রায়ই বলা হয় ‘পৃথিবীর স্বর্গ’, তার হৃৎপিণ্ডে অবস্থিত পাহালগাম। জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় লিডার নদীর তীরে ৭,২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ছোট্ট শহরটি পর্যটকদের কাছে এক অপরূপ সৌন্দর্যের গন্তব্য। কাশ্মীরি ভাষায় ‘পেহেলগাম’ মানে ‘গোয়ালদের গ্রাম’, তবে আজ এটি আর শুধু গোয়ালদের নয়, বরং দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমীদের মন জয় করা এক নির্মল আশ্রয়স্থল। এশিয়ার সুইজারল্যান্ড খ্যাত এই পাহালগাম তার অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্ত পরিবেশ এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত।

পেহেলগামে পা রাখলেই চোখে পড়ে তার সবুজ মখমলের মতো উপত্যকা, তুষারাবৃত পাহাড়, ঝর্ণার কলধ্বনি আর লিডার নদীর স্বচ্ছ জলধারা। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, মনে হয় প্রকৃতি নিজের হাতে এঁকেছে এক অপূর্ব ছবি। শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পেহেলগামে যাওয়ার পথটিও কম সুন্দর নয়। পথে পাইন ও চিনার গাছের সারি, জাফরানের খেত আর দূরের তুষারশৃঙ্গ মনকে আচ্ছন্ন করে।

পাহালগাম

পাহালগাম

পেহেলগামের আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম হলো বেতাব ভ্যালি। বলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘বেতাব’-এর শুটিংয়ের জন্য নামকরণ করা এই উপত্যকা তার সবুজ ঘাসের মাঠ আর পাহাড়ের পটভূমিকায় পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এছাড়া আরু ভ্যালি তার শান্ত পরিবেশ আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। বাইসারান, যাকে বলা হয় ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’, তৃণভূমি আর পাহাড়ের সমন্বয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। চন্দনওয়ারী, যা অমরনাথ যাত্রার প্রবেশপথ, তুষারে ঢাকা পথ আর হিমবাহের জন্য পরিচিত।

পাহালগাম শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্যও এক আদর্শ গন্তব্য। ট্রেকিং, ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ি পথে ভ্রমণ, ক্যাম্পিং এবং রিভার রাফটিং এখানে জনপ্রিয়। তুলিয়ান লেক ট্রেকিংয়ের জন্য একটি চমৎকার গন্তব্য, যেখানে পৌঁছাতে প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এছাড়া কোলাহাই হিমবাহ ট্রেক অভিজ্ঞ ট্রেকারদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং অভিযান। শীতকালে পাহালগাম তুষারে ঢেকে যায়, এবং তখন এটি স্কিইং ও স্নোবোর্ডিংয়ের জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে।

পাহালগাম

পাহালগাম

পেহেলগামের স্থানীয় সংস্কৃতি কাশ্মীরি ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। এখানকার মানুষজন অতিথিপরায়ণ এবং তাদের জীবনযাত্রায় কাশ্মীরি শিল্প ও সংস্কৃতির ছোঁয়া স্পষ্ট। মামলেশ্বর মন্দির, একটি প্রাচীন শিব মন্দির, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, পেহেলগাম অমরনাথ যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এখান থেকে অমরনাথ গুহার উদ্দেশে যাত্রা করেন।

পেহেলগাম ভ্রমণের সেরা সময় মার্চ থেকে নভেম্বর। এপ্রিল-মে মাসে এখানকার প্রকৃতি ফুলে-ফলে সেজে ওঠে, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ। তবে শীতপ্রিয় পর্যটকদের জন্য ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি উপযুক্ত, যখন তুষারপাতের মধ্যে পেহেলগাম এক রূপকথার জগতে পরিণত হয়। তবে এই সময়ে তীব্র ঠান্ডা ও তুষারপাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

কাশ্মীরের পাহালগাম। ফাইল ফটো

কাশ্মীরের পাহালগাম। ফাইল ফটো

পেহেলগামে পৌঁছানো বেশ সহজ। শ্রীনগর বিমানবন্দর নিকটতম বিমানবন্দর, যা পেহেলগাম থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া জম্মু রেলস্টেশন থেকে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে শ্রীনগর হয়ে পাহালগাম পৌঁছানো যায়। শ্রীনগর থেকে পাহালগামের রাস্তা অত্যন্ত সুন্দর এবং প্রাইভেট জিপ বা ট্যাক্সিতে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

পেহেলগামে বিলাসবহুল রিসোর্ট থেকে শুরু করে বাজেট হোটেল, সব ধরনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। শীতকালে কিছু হোটেল বন্ধ থাকলেও গ্রীষ্মকালে পর্যটকদের ভিড়ে এটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। কাশ্মীরি খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। ‘রোগান জোশ’, ‘দম আলু’, ‘গুস্তাবা’ এবং কাশ্মীরি কাহওয়া এখানকার বিশেষ আকর্ষণ।

পেহেলগাম কেবল একটি ভ্রমণ গন্তব্য নয়, এটি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক অপূর্ব সুযোগ। এখানকার শান্তি, সৌন্দর্য আর স্থানীয় সংস্কৃতি যে কোনো ভ্রমণকারীর মন ভরিয়ে দেবে। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে জানা যায়, পেহেলগামে নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ভ্রমণের আগে স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে প্রস্তুতি নিলে পেহেলগাম আপনাকে উপহার দেবে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net