স্টাফ রিপোর্টার ।।
পুরান ঢাকার কিংবদন্তি রাজনীতিক ও ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুর হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে রবিবার সকালেই অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তৃতা দেন তাঁর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা। তিনি বিডিআর হত্যাকাণ্ডে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে তৎকালীন এসবি প্রধান এবং বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমের অপসারণ ও বিচারের দাবি জানান।
সমাবেশের শিরোনাম ছিল: “নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুকে কারাগারে হত্যা এবং ৫৭ জন সাহসী সেনা কর্মকর্তার নির্মম হত্যাকাণ্ডের মামলায় ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ কর্তৃক প্রমাণিত অপরাধী আইজিপি বাহারুল আলমকে অনতিবিলম্বে অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা”।
- শহীদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশ
- নাসিমা আক্তার কল্পনা পিন্টুর নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেন
- স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে আইজিপির অপসারণের দাবি
- তৎকালীন সরকারদলীয় নেতাদের দ্বারা পিন্টুর পরিবারও নির্যাতনের শিকার
- পিন্টুর ছেলে ও রাজনৈতিক সহযোগীরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন
নাসিমা আক্তার কল্পনা বলেন, “নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু তার দেশের ও দলের জন্য জীবন দিয়েছেন। তিনি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। পরিবার ও ম্যাডাম খালেদা জিয়ার একজন আদর্শ সৈনিক ছিলেন। তবু তাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০০৯ সালের জুনে হাইকোর্ট চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, তখনকার সিআইডি প্রধান কাহার আকন্দ তাকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যান এবং পরে উত্তরা টিএফ সেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে পিন্টুকে ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিতে চেষ্টা করা হয়েছিল। কল্পনা বলেন, “আমি টিএফ সেলে ওষুধ ও কাপড় দিতে গেলে আমাকে গেট থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমার সাথে কথা বলতেও দেননি। পিন্টুকে আয়নাঘরসহ বিভিন্ন স্থানে টর্চার করা হয়েছে এবং বারবার বলানো হয়েছে, বিএনপি নেতারা পিলখানা হত্যায় জড়িত।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পিন্টুর সঙ্গে শুধু নয়, তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতা তাপস ও হাজী সেলিমের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পিন্টুর ভাই অপহরণ ও নির্যাতনের মুখে পড়েন এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কল্পনা বলেন, “হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে পিন্টুকে রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে, যেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীন তদন্ত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এখন জানা যাচ্ছে, তৎকালীন এসবি প্রধান বাহারুল আলম এই ঘটনায় জড়িত ছিলেন।”
তিনি দাবি করেন, ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে হত্যাকাণ্ডকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন বর্তমান আইজিপি। এই মিথ্যা তথ্য প্রদানের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। অন্তর্বর্তী সরকার যেন অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় আনে।
নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী বলেন, “আমরা নিজেরা কিছু বলছি না, তদন্ত কমিশন বলছে। যদি রিপোর্টে বর্তমান আইজিপির সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে তার অপসারণ চাই।”
প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পিন্টুর ছেলে নাহাম আহম্মেদ, যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের সভাপতি রফিক আহমেদ ডলার, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির সেলিমসহ পিন্টুর রাজনৈতিক পথচলায় তার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদল-যুবদল নেতারা।