স্পেসটেটর ।।
২০২৫ সালের ৯ জুলাই, বুধবার: রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা TASS একটি বৈপ্লবিক উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ব সাংবাদিকতার ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) একজন পেশাদার রিপোর্টার পাঠিয়ে তারা মহাকাশ থেকে সরাসরি সংবাদ পরিবেশনের এক অভিনব প্রয়াস শুরু করেছে। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকোসমোস (Roscosmos)-এর সহযোগিতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নভোচারী ও সাংবাদিক আলেক্সেই জুব্রিতস্কি (Alexey Zubritsky) মহাকাশ থেকে রিপোর্ট, ছবি, এবং ভিডিও পাঠাচ্ছেন।
উদ্যোগের পটভূমি এবং আলেক্সেই জুব্রিতস্কির ভূমিকা
২০২৫ সালের ১৫ মার্চ, আলেক্সেই জুব্রিতস্কি সয়ুজ এমএস-২৩ মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছান। তিনি TASS-এর ষষ্ঠ মহাকাশ সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে, ২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে আরও পাঁচজন নভোচারী এই ভূমিকায় কাজ করেছেন। আলেক্সেইয়ের পাঠানো রিপোর্ট, উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি, এবং ভিডিও সরাসরি TASS-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (tass.com), সামাজিক মাধ্যম, এবং রাশিয়ার অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এই রিপোর্টগুলোতে মহাকাশ স্টেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রম, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, এবং নভোচারীদের জীবনযাত্রার বিস্তারিত বিবরণ থাকে, যা সাধারণ মানুষের কাছে মহাকাশ বিজ্ঞানকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে।
আলেক্সেই জুব্রিতস্কি: নভোচারী ও সাংবাদিক
১৯৯২ সালে মস্কোতে জন্মগ্রহণকারী আলেক্সেই জুব্রিতস্কি পেশাগতভাবে একজন প্রশিক্ষিত নভোচারী। তিনি ২০১৬ সালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং ২০২১ সাল থেকে রসকোসমোসের নভোচারী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যুক্ত হন। তিন বছরের কঠোর প্রশিক্ষণের পর তিনি মহাকাশ অভিযানের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন। মহাকাশে তার প্রধান কাজ হলো ISS-এর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করা, তবে TASS-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তিনি এখন মহাকাশ থেকে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে নিয়োজিত। তার রিপোর্টগুলোতে মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মহাকাশ স্টেশনের প্রযুক্তিগত দিক, এবং নভোচারীদের মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
উদ্যোগের তাৎপর্য
TASS এবং রসকোসমোসের এই উদ্যোগ মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে সাংবাদিকতার এক অনন্য সংমিশ্রণ। এটি শুধু মহাকাশ বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য করে তুলছে না, বরং রাশিয়ার মহাকাশ কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়াচ্ছে। আলেক্সেইয়ের রিপোর্টগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে মহাকাশ অভিযানের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি সম্প্রতি ISS-এর একটি পরীক্ষা নিয়ে রিপোর্ট করেছেন, যেখানে নভোচারীরা মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করছেন, যা ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে কৃষিকাজের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণার অংশ।
বৈশ্বিক প্রভাব
রাশিয়ার এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করছে। মহাকাশ থেকে সরাসরি সংবাদ প্রচার শুধু তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতিই নয়, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণার প্রতি কৌতূহল সৃষ্টি করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাশিয়া প্রমাণ করছে যে, সাংবাদিকতার সীমানা পৃথিবীর বাইরেও প্রসারিত হতে পারে। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগ অন্যান্য দেশের মহাকাশ সংস্থা ও গণমাধ্যমের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।
এই উদ্যোগের ফলে, মহাকাশ এখন আর শুধু বিজ্ঞানীদের গবেষণার ক্ষেত্র নয়, বরং সাংবাদিকতার নতুন মঞ্চ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আলেক্সেই জুব্রিতস্কির মতো নভোচারী-সাংবাদিকরা মহাকাশের রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি বিশ্ববাসীকে মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে আরও গভীরভাবে সংযুক্ত করছেন।