সবজান্তা সমশের ।।
রোসাটম (Rosatom) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী পরমাণু সংস্থা। এটি রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি শিল্পের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক এবং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে পারমাণবিক গবেষণা, জ্বালানি উৎপাদন ও রপ্তানি, চিকিৎসা, মহাকাশ গবেষণা এবং সামরিক ক্ষেত্রে পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার—সব ক্ষেত্রেই রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
রোসাটমের যাত্রা শুরু হয় সোভিয়েত আমলে, যখন ১৯৪৫ সালে দেশটি পারমাণবিক শক্তির উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করে। ২০০৭ সালে রাশিয়ান ফেডারেশন এটি একটি রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনে রূপান্তর করে, যার প্রধান লক্ষ্য পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা। বর্তমানে রোসাটম বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে পারমাণবিক প্রকল্প পরিচালনা করছে।
রোসাটম মূলত পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করে। বর্তমানে এটি বিশ্বের ১১টি দেশে ৩৩টির বেশি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ইউরেনিয়াম খনন থেকে শুরু করে পারমাণবিক চুল্লি (reactor) নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত এই সংস্থা পুরো চেইনটি পরিচালনা করে।
বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রোসাটমের সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের দুটি ইউনিটের মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২,৪০০ মেগাওয়াট। রোসাটম প্রকল্পটি ডিজাইন, নির্মাণ ও প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করবে।
রোসাটমের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন। এটি সর্বাধুনিক VVER-1200 রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করছে, যা আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এছাড়া, সংস্থাটি নবায়নযোগ্য শক্তির বিকাশ ও পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কাজ করছে।
রোসাটম কেবল রাশিয়ার নয়, বরং বৈশ্বিক পারমাণবিক শক্তি খাতের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য টেকসই শক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। বাংলাদেশ, তুরস্ক, মিসরসহ বহু দেশে রোসাটমের উপস্থিতি পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।