স্টাফ রিপোর্টার ।।
এনসিপি নেতা সারজিস আলমের নিজ এলাকায় বিশাল শোডাউন ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চলছে তুমুল আলোচনা। ১০০ গাড়ির এই বিশাল বহর নিয়ে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ছড়িয়েছে, তখনই এনসিপির আরেক নেত্রী ডা. তাসনিম জারা খোলাখুলিভাবে প্রশ্ন তুলেছেন।
এক ফেসবুক পোস্টে ডা. জারা সরাসরি ইঙ্গিত করেন, কিছুদিন আগেও যিনি নিজেকে আর্থিক সংকটে থাকা নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন, তিনি এত বড় আয়োজন কীভাবে করলেন? তিনি আরও বলেন, এনসিপি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নীতিতে বিশ্বাসী, তাই জনগণের সামনে এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি।
ডা. তাসনিম জারার উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম একটি দীর্ঘ খোলা চিঠি লিখেছেন, যেখানে তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে, রাজনীতিতে নতুন এলেই যে সেই ব্যক্তি আর্থিকভাবে দুর্বল হবে, সেটি সঠিক ধারণা নয়।
তিনি বলেন, “আমার নিজস্ব সামর্থ্য কম থাকলেও আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থান যথেষ্ট শক্তিশালী। আমার আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় এই আয়োজন করা হয়েছে, যা পুরোপুরি ব্যক্তিগত উৎস থেকে এসেছে। এটি কোনও অবৈধ উপায়ে সংগৃহীত অর্থ নয়।”
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতি অত্যন্ত জটিল এবং ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা রয়েছে। ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি কখনোই এক নয়।
“সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক বুদ্ধিজীবী রাজনীতিকে কল্পনার এক ফ্রেমে বন্দি করে ফেলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মাঠের রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে জনসমর্থন ও রাজনৈতিক শক্তি দেখানো জরুরি। আপনি যদি প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য না দেখাতে পারেন, তাহলে সাধারণ জনগণও আপনাকে পাত্তা দেবে না।”
তিনি স্বীকার করেন যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে, তবে সেটি রাতারাতি সম্ভব নয়। পরিবর্তন ধাপে ধাপে আসবে, সরাসরি সবকিছু উল্টে দিলে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।
তাসনিম জারার মূল প্রশ্ন ছিল, এত বড় শোডাউনের ব্যয় কীভাবে মেটানো হলো? জবাবে সারজিস আলম জানান, তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল, তাই তারা এই ব্যয় নির্বিঘ্নে বহন করতে পেরেছেন।
“আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও জেলার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী নিজেদের উদ্যোগে এই আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। অর্ধেকের বেশি গাড়ি আমার ব্যক্তিগত খরচে আসেনি, বাকিগুলোর ভাড়া বাবদ তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, যা আমার পরিবার ৫০ বছর আগেও বহন করতে পারত।”
এই বিতর্ক এখন শুধু সামাজিক মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নেই, এনসিপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। দলের মধ্যে স্বচ্ছতার দাবি উঠেছে, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
তাসনিম জারার বক্তব্য যেখানে স্বচ্ছতার পক্ষে, সেখানে সারজিস আলম বাস্তব রাজনীতির প্রয়োজনে প্রচলিত পন্থাগুলো অনুসরণ করার পক্ষে। এই বিতর্ক এনসিপির নীতি ও ভবিষ্যৎ কৌশলে কী ধরনের পরিবর্তন আনে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।