স্টাফ রিপোর্টার ।।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর যুগ্ম আহ্বায়ক (বর্তমানে স্থগিত) সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন দলটির সদস্য ও নিজেকে ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি পরিচয় দেওয়া নেত্রী নীলা ইসরাফিল। লিখিত অভিযোগে তিনি তুষারের বিরুদ্ধে অনৈতিক ও শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে সাংগঠনিক তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন। তার এই অভিযোগ দলের তদন্ত কমিটির পাশাপাশি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অভিযোগপত্রটি প্রকাশ করেন নীলা ইসরাফিল। এতে তিনি দাবি করেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে এক দুঃসময়ে তিনি নেপালে আশ্রয় নেন এবং সেই সময় দলীয় সহকর্মী হিসেবে সারোয়ার তুষার তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তবে সময়ের সঙ্গে এই সম্পর্ক তিনি ‘অনৈতিক ও ব্যক্তিগত রূপ’ নিতে দেখেন, যা এক পর্যায়ে যৌন হয়রানির পর্যায়ে পৌঁছায়।
অভিযোগে নীলা লিখেছেন, সারোয়ার তুষার প্রায়ই গভীর রাতে তাকে ফোন করে ব্যক্তিগত ও আপত্তিকর মন্তব্য করতেন। তিনি তার কণ্ঠস্বরের প্রশংসা করে ‘একটা সুন্দর ছবি পাঠাও’ জাতীয় মন্তব্য করতেন, যা নীলাকে অপমানিত ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলত। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তুষার একাধিকবার ভিডিও কলে কথা বলার জন্য চাপ দিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত ছবি চেয়েছেন। এমনকি একবার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার কাছে তাকে নিজের ‘গার্লফ্রেন্ড’ বলেও পরিচয় দেন, যা নীলার মতে তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।
নীলা আরও উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে সারোয়ার তুষারের সঙ্গে কয়েকটি ফোনালাপ রেকর্ড করেন তিনি। ১৬ জুন তার একটি রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুষার তাকে চাপ দিতে থাকেন যেন তিনি ফেসবুকে ‘তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই’ বলে বিবৃতি দেন। এরপর নীলা আরও দুটি রেকর্ড করেন এবং কিছু মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকের মাধ্যমে সেগুলো প্রচারেও সম্মতি দেন।
নীলার দাবি, দলের পক্ষ থেকে তার অভিযোগ বা নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো সহানুভূতিশীল বা আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ১৯ জুন এনসিপির পক্ষ থেকে তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হলেও তার আগেই ১৭ জুন তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয় এবং তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে বলা হয়।
এই অভিযোগে দলীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি নীলা এনসিপির কাছে তিনটি দাবি উত্থাপন করেছেন—
১. সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে একটি নিরপেক্ষ, নারীবান্ধব ও স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. নারী কর্মীদের জন্য কার্যকর, নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা চালু করা।
৩. দল যেন দায়িত্ব এড়িয়ে না গিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে সাহসী অবস্থান গ্রহণ করে, যা দলকে আরও বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে।
উল্লেখ্য, এর আগে একাধিক ফেসবুক পেইজে একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে সারোয়ার তুষার এবং এক নারী নেত্রীর কথোপকথন নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হয়। এমনকি ফোনালাপের সঙ্গে দলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীনের ছবিও বসিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়। এনসিপি নেতারা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রয়োজন হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছেন।
সারোয়ার তুষার নিজেও ১৭ জুন তার ফেসবুক পোস্টে ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি লেখেন, “দুই ব্যক্তির ব্যক্তিগত কথোপকথন বিনা অনুমতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়া জঘন্য কাজ। আমি ভুলের ঊর্ধ্বে নই, কিন্তু তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাঁটাছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই।”
এ অবস্থায়, দলীয় তদন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং এনসিপি নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, তা আগামীর জন্য নজরদারির বিষয় হয়ে উঠেছে।