প্রোফাইল ডেস্ক ।।
শাইখা মোজা বিনতে মারওয়ান বিন মোহাম্মদ বিন হাসের আল মাকতুম হলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক পরিবারের অন্যতম সদস্য। তিনি আল মাকতুম পরিবারের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, যা দুবাইয়ের শাসক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুমের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।
পারিবারিক ঐতিহ্য ও শাসন
শাইখা মোজার পরিবার আল-বু ফালাসাহ গোত্রের বনী ইয়াস শাখার অন্তর্গত, যা আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে শতাব্দীর পর শতাব্দী নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ১৮৩৩ সাল থেকে আল মাকতুম পরিবার দুবাই শাসন করে আসছে এবং এর অধীনে শহরটি অসাধারণ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।
তার মাতৃ-পিতামহ ছিলেন প্রয়াত শেখ মাকতুম বিন রাশিদ আল মাকতুম, যিনি দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদের ভাই ছিলেন। শেখ মাকতুম ছিলেন সেই নেতা, যিনি সাম্প্রতিক দশকগুলোর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
আকাশের প্রতি টান ও পাইলট হওয়ার স্বপ্ন
১৯৯৬ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করা শেখা মোজা ছোটবেলা থেকেই দুঃসাহসিক অভিযানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ঘোড়দৌড়, রক ক্লাইম্বিং, বক্সিং এমনকি স্কাইডাইভিং-এর মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং কাজে তার প্রবল আগ্রহ ছিল।
মাত্র ১২ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যে এক পারিবারিক ভ্রমণের সময় প্রথমবার বিমানে ওড়ার অনুভূতি তার মধ্যে গভীর ভালোবাসার জন্ম দেয়। এরপর ১৩ বছর বয়সেই তিনি তার প্রথম স্কাইডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এই দুটো মুহূর্ত তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, এবং তিনি স্থির করেন যে আকাশই হবে তার পরবর্তী গন্তব্য।
১৭ বছর বয়সে তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বিমানচালনা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড এভিয়েশন একাডেমিতে ভর্তি হন। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি তার প্রথম একক ফ্লাইট সম্পন্ন করেন, যা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।
ইতিহাস গড়ার যাত্রা
শাইখা মোজা সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বাণিজ্যিক পাইলট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। তার এই অর্জন শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই নয়, বরং এটি এমিরাতি নারীদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ আল মাকতুম তার এই কৃতিত্বে গর্বিত হয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেন এবং তাকে অভিনন্দন জানান।
নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা
শাইখা মোজা বিশ্বাস করেন, আমিরাতি তরুণদের মধ্যে ‘অসম্ভব’ বলে কিছু নেই। তিনি তরুণদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আত্মবিশ্বাসী হতে এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পরামর্শ দেন। তার মতে, “যদি আমরা শুধুমাত্র স্বপ্ন দেখেই বসে থাকি, তবে তা কখনোই বাস্তবায়িত হবে না। আমাদের কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে।”
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
শাইখা মোজার লক্ষ্য কেবল নিজের ক্যারিয়ার গড়া নয়, বরং আগামী প্রজন্মের এমিরাতি তরুণ-তরুণীদের জন্য পথ প্রশস্ত করা। তিনি চান, তার গল্প নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকুক, বিশেষ করে যারা আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে।
এমিরাতি নারীরা ইতোমধ্যে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, উদ্যোক্তা এবং এভিয়েশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখছে। শেখা মোজার এই অভাবনীয় সাফল্য তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও উজ্জ্বল করবে।
শাইখা মোজা বিনত মারওয়ান আল মাকতুম, শুধুমাত্র একজন সফল পাইলটই নন, বরং তিনি একজন স্বপ্নচারী, যিনি প্রমাণ করেছেন যে সংকল্প ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যে কেউ আকাশ ছুঁতে পারে।