ডেস্ক রিপোর্ট ।।
‘দেখিস, একদিন, আমরাও…’—দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে বহুল উচ্চারিত এই আশার বাক্য অবশেষে বাস্তবে রূপ নিল লর্ডসের মাটিতে। টেস্টে ফিরে আসার ৩৩ বছর পর তারা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) শিরোপা জিতে প্রমাণ করল—সুযোগ পেলেই আঘাত করতে জানে প্রোটিয়ারা। চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে ৫ উইকেটে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমবারের মতো টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো।
লর্ডসে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়া করে জয় এনে দিলেন এইডেন মার্করাম, যিনি খেলেছেন ১৩৬ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস। ম্যাচসেরা এই ব্যাটারের ব্যাটে ভর করেই ইতিহাস গড়েছে দলটি। টেম্বা বাভুমার হ্যামস্ট্রিংয়ের ব্যথা সত্ত্বেও ৬৬ রানের লড়াকু ইনিংস এবং মার্করামের সঙ্গে ১৪৭ রানের পার্টনারশিপ দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দিয়েছে স্বপ্নপূরণের সুযোগ।

ম্যাচ সেরা এইডেন মার্করাম
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস মাত্র ১৩৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরও, তারা ফিরে এসেছে দারুণভাবে। রাবাদার দুর্দান্ত বোলিং (৫/৫১ ও ৪/৫৯) এবং এনগিডির সহায়তায় অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৭ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর ম্যাচে ফিরে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানের লিড নিয়েও ম্যাচ হাতছাড়া করেছে অজিরা।
চতুর্থ দিন সকালে মাত্র ৬৯ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। উত্তেজনা ছড়ানো এই রান তাড়ার শুরুতে বাভুমা আউট হলেও ছন্দ হারায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। স্টার্ক ও কামিন্সের দুর্দান্ত বোলিংও থামাতে পারেনি জয়যাত্রা। দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পর হ্যাজলউডকে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মার্করাম, তবুও জয় নিশ্চিত হয় কাইল ভেরেইনার কভারের ভেতর দিয়ে মারা এক দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারিতে।
এই জয় শুধু একটি ম্যাচ জয় নয়, এটি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় মুহূর্ত। কারণ ১৯৯২ সালে টেস্টে ফিরে আসার পর তারা বারবার বিশ্বমঞ্চে হোঁচট খেয়েছে—বিশ্বকাপে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে, নকআউট ম্যাচে। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় আইসিসি নকআউট ট্রফি জেতা ছিল একমাত্র গর্ব, যেটিকে ‘বিশ্বকাপ’ ধরা হয় না। এবার সেই অপূর্ণতা ঘুচিয়ে ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ তকমা নিজেদের করল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ড্রেসিংরুমে বাভুমা ও তাঁর দল যখন উল্লাসে মাতোয়ারা, তখন চোখে জল আনা আনন্দে ডুবে আছে সমর্থকরা। ক্রিকেট দুনিয়ায় দীর্ঘদিন ‘আন্ডার অ্যাচিভার’ তকমা পাওয়া একটি দল অবশেষে বিশ্বজয়ের উল্লাসে মাতল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২১২ (ওয়েবস্টার ৭২, স্মিথ ৬৬; রাবাদা ৫/৫১) ও ২০৭ (স্টার্ক ৫৮; রাবাদা ৪/৫৯, এনগিডি ৩/৩৮)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৩৮ (বেডিংহাম ৪৫; কামিন্স ৬/২৮) ও ২৮২/৫ (৮৩.৪ ওভারে) (মার্করাম ১৩৬, বাভুমা ৬৬*, স্টার্ক ৩/৬৬)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এইডেন মার্করাম