সবজান্তা সমশের ।।
সাংবাদিকতা মানে শুধু তথ্য সংগ্রহ বা সংবাদ পরিবেশন নয়। এটি এমন একটি শিল্প যেখানে দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং গভীর জ্ঞান একত্রে মিশে তৈরি হয় এক নতুন মাত্রা, নতুন গল্প। আর এই ধারণাকেই নেতৃত্ব দেয় ট্যালেন্ট-ড্রিভেন জার্নালিজম বা প্রতিভা-নির্ভর সাংবাদিকতা। এটি এমন সাংবাদিকতার ধারা, যেখানে ব্যক্তি সাংবাদিকের বিশেষজ্ঞতা ও প্রতিভা তার কাজকে করে তোলে অন্যদের থেকে আলাদা, আকর্ষণীয় এবং বিশ্বস্ত।
শুরুটা কেমন?
ধরা যাক, একজন সাংবাদিক, নাম তার আরিফুল। তিনি আর দশজন সাংবাদিকের মতো সাধারণ প্রতিবেদন করেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। কিন্তু অর্থনীতি বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান এবং জটিল বিষয়কে সহজভাবে ব্যাখ্যা করার দক্ষতা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
একদিন তিনি একটি প্রতিবেদনে তুলে আনলেন কেন দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে এবং এর পেছনের অর্থনৈতিক কারণ কী। তিনি শুধু তথ্য উপস্থাপন করলেন না, বরং এমন কিছু উদাহরণ ও ব্যাখ্যা দিলেন, যা সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারল। তার কাজ শুধু পাঠকদের তথ্য দেয়নি; বরং তাদের ভাবতে শিখিয়েছে।
প্রতিভা-নির্ভর সাংবাদিকতার মূল বৈশিষ্ট্য কী?
১. বিশেষজ্ঞতা: সাংবাদিকের কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে গভীর জ্ঞান থাকা, যেমন—অর্থনীতি, প্রযুক্তি, পরিবেশ বা সংস্কৃতি।
২. সৃজনশীলতা: কেবল তথ্য নয়, গল্প বলার ভঙ্গিমায় পাঠকদের আকর্ষণ করার দক্ষতা।
৩. বিশ্বাসযোগ্যতা: একজন সাংবাদিক যখন তার কাজে দক্ষতা ও গবেষণার ছাপ রাখেন, তখন তা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
৪. অভিনব উপস্থাপনা: তথ্যকে কেবল কাগজে-কলমে বা ক্যামেরায় নয়, পাঠকের মনকে নাড়া দেওয়ার মতোভাবে উপস্থাপন।
উদাহরণ:
আমরা যদি ভেবে দেখি একজন পরিবেশ সাংবাদিক, যিনি কেবল বন ধ্বংস বা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রিপোর্ট করেন না, বরং তাতে জীবন্ত ছবি আঁকেন—কেমন করে একটি বনের ধ্বংস স্থানীয় মানুষের জীবন বদলে দেয়। এমন গল্প পড়লে বা দেখলে পাঠক বা দর্শক শুধু তথ্য জানে না, বরং সেই পরিবেশগত বিপর্যয়ের গভীরতা উপলব্ধি করে।
কেন প্রয়োজন?
প্রতিভা-নির্ভর সাংবাদিকতার প্রয়োজন এ কারণে:
- এটি পাঠক বা দর্শকদের আস্থা তৈরি করে।
- এটি সাংবাদিকতার গুণগত মান বাড়ায়।
- এটি তথাকথিত “সংবাদ” এর বাইরে গিয়ে মানুষের মন জয় করে।
- এটি সংবাদের সঙ্গে ব্যক্তি সাংবাদিকের “মানুষি স্পর্শ” নিয়ে আসে।
আজকের পৃথিবীতে এর গুরুত্ব:
আজকের ডিজিটাল যুগে তথ্যের ছড়াছড়ি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে নিউজ পোর্টাল, সব জায়গায় রয়েছে লাখো সংবাদ। কিন্তু তার মধ্যে কেবল সেই খবরই টিকে থাকে, যা মানুষকে প্রভাবিত করে। আর এই প্রভাব তৈরি করতে পারে ট্যালেন্ট-ড্রিভেন জার্নালিজম।
সুতরাং, ভবিষ্যতের সাংবাদিকতা হবে এমন যেখানে প্রতিটি সাংবাদিক হবে একজন গল্পকার, যার দক্ষতা ও প্রতিভা তার কণ্ঠস্বরকে করবে সবচেয়ে আলাদা এবং শক্তিশালী। প্রতিভা-নির্ভর সাংবাদিকতা মানে সাংবাদিকতার এক নতুন অধ্যায়, যেখানে প্রতিভাই সব।