সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

পাকিস্তানি ব্যবসায়ীর জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়

২০১২ সালের ৬ জুন ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক শেখ হাসিনার নামে জায়গাটির দলিল করে দেন।

by ঢাকাবার্তা
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ফটো

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

ঢাকার গুলিস্তানে এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন জায়গা জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। অবৈধভাবে দখল করা এই জায়গায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দশতলা ভবন রয়েছে। জায়গাটির স্থায়ী দলিল শেখ হাসিনার নামে করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ আয়তনের মূল্যবান এই জায়গা দখলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তদন্ত কমিটি এই বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ১২ জুন ভূমি মন্ত্রণালয় দলটির অনুকূলে জায়গাটি বন্দোবস্ত অনুমোদন দেয়। একই বছরের ৬ জুন ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক শেখ হাসিনার নামে জায়গাটির দলিল করে দেন। তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ফটো

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ফটো

তদন্তে উঠে এসেছে, এই জমি আগে এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ীর মালিকানায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশ ত্যাগ করলে সরকার এটি ‘অনিবাসী সম্পদ’ ঘোষণা করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় নেয়। পরে আওয়ামী লীগ এটি দখল করে নেয়। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগ এই ভবনটি তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।

১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম জমিটি বরাদ্দের প্রস্তাব দেন। তবে এটি তখন চূড়ান্ত হয়নি। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় সাঈদ খোকন জায়গাটি লিজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ২০১২ সালে ঢাকার জেলা প্রশাসক শেখ হাসিনার নামে জমিটির স্থায়ী বন্দোবস্ত দেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, এই মূল্যবান জায়গাটি উদ্ধারের জন্য সরকার একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অনিয়ম, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এ কমিটি।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বর্তমান অবস্থা।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বর্তমান অবস্থা।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় জমির প্রকৃত মালিক নয়। কাজেই এ দলিলের কোনো কার্যকারিতা নেই এবং এটি ভুয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা সব নথিপত্র সংগ্রহ করেছি এবং সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি পুরো জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত ও অনুসন্ধান করছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে এসেছে, দখলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগের পলাতক সভাপতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্তমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী মো. রেজাউল করিম হীরা, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকার সাবেক ডিসি ও বিমান মন্ত্রণালয় থেকে অবসরে যাওয়া সচিব মহিবুল হক, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনেন্দ্র নাথ সরকার, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক কালেক্টর সাইফুল ইসলাম আজাদ।

তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সূত্র : আমার দেশ

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net