সাইফ হাসনাত ।।
সাকিব আল হাসানের দীর্ঘ সময়ের একজন কোচ, অত্যন্ত সম্মানিত একজন কোচ, যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবেই সম্মান করি তার ক্রিকেটজ্ঞানের জন্য, তিনি একটা জাতীয় দৈনিকে লেখা কলামে দেশে সাকিবের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে আলাপে বলেছেন, “আপনাকে যখন নিজের দেশে আসতে অনেক কিছু চিন্তা করতে হবে, তখন সবই কঠিন হয়ে পড়ে। আর যা–ই হোক, দেশটা তো তার নিজের!”
এইটা অত্যন্ত ওভার সিম্প্লিফাইড একটা আলাপ, এবং এখানে বাস্তব পরিস্থিতির বর্ণনা বা চিত্র অনুপস্থিত। যেহেতু লেখাটা ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে, সুতরাং এই দলিলগুলো নিয়ে আলাপ এবং প্রশ্ন তোলা বা প্রশ্ন জারি রাখা জরুরি।
দেশটা সাকিবের নিজের— এইটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি নেই। কিন্তু সেই নিজের দেশে ফিরতে তাকে কেনো অনেক কিছু চিন্তা করতে হচ্ছে, সেই বাস্তব এবং অবধারিত প্রশ্ন এবং তার উত্তর সন্ধানও তো জরুরি। আমরা দেখেছি সাকিব জাতীয় দলে খেলতে থাকা অবস্থায়ই রাজনীতিতে যোগ দিতে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন, ক্রিকেটার-সত্তায় নির্ভর করে যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা তিনি অর্জন করেছিলেন, তার পুরোটাই বাজি রেখে শেষ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। আমার ধারণা এই সিদ্ধান্তের ফলে যে ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কথা, সাকিব সেটা অবশ্যই জানতেন। সেটা জেনেও তিনি কাজ করেছেন, এবং এমন একটি রেজিমের যোগ দিয়েছেন যাদের লেজিটিমেসি নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে স্পষ্ট প্রশ্ন উঠেছে, শতশত মানুষকে খুন ও গুমে যারা অভিযুক্ত হয়ে পড়েছে।
(যে কোনো ব্যক্তি তার পছন্দের যে কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারে, এটা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনো আপত্তি নেই।)
সুতরাং “নিজের দেশে” ফেরার জন্য সাকিবকে যে অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে, এর দায়টা এই দেশের না।
উল্লেখিত লেখাটার শিরোনামে কোচ এটা পরিষ্কার করেছেন রাজনীতিতে জড়িয়েছেন বলেই সাকিব তার পারফর্ম্যান্স নিয়ে চাপে পড়েছেন। এটা ভালো যে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার নীতিবাচকতা তুলে ধরেন। তবে এর প্রভাবটা শুধু তার পারফর্ম্যান্সের সীমিত থেকেছে, তা কিন্তু নয়; বরং সেই প্রভাব এতোটাই প্রভাববিস্তারি যে সাকিব এখন দেশে ফিরতেই ভয় পাচ্ছেন, এমন কি ক্রিকেট বোর্ডও তার নিরাপত্তা দিতে পারবে কি না তা নিয়ে শংকিত।
সুতরাং শুধুমাত্র ওভার সিম্প্লিফাইড ভিউয়ে ইতিহাসের সত্য, এবং পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা আড়ালে পড়ে যাওয়ার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তা কিন্তু সুফল বয়ে আনে না; বরং সময়ের ক্ষতে দীর্ঘ পচনের শংকা তৈরি করে।
ফেসবুকে সাইফ হাসনাতের (পাবলিক) পোস্ট