ডেস্ক রিপোর্ট ।।
শান্তিতে নোবেলজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মৃত্যুবরণ করেছেন। স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্লেইনসে নিজ বাড়িতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। কার্টারের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, কার্টার সেন্টার।
জিমি কার্টার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। গত অক্টোবর মাসে তিনি তাঁর ১০০তম জন্মদিন উদ্যাপন করেছিলেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
কার্টারের শাসনকাল এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ
কার্টারের শাসনামল ছিল অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সংকটে পরিপূর্ণ। তবে তাঁর কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি, যেখানে তিনি ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পানামার কাছে হস্তান্তর করে তিনি কূটনীতিতে ন্যায্যতার বার্তা দিয়েছিলেন।

বাদশাহ খালিদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার।
তাঁর শাসনকালে ইরানের জিম্মি সংকট ছিল অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া এই সংকটে তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে ৫০ জনের বেশি আমেরিকান ৪৪৪ দিন ধরে জিম্মি ছিলেন। সংকটের সমাধানে একটি সামরিক অভিযান চালালেও তা ব্যর্থ হয়। এই ঘটনা তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়।
মানবিক কাজের জন্য স্বীকৃতি
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর মানবিক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করেন কার্টার। তাঁর নেতৃত্বে কার্টার সেন্টার বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রোগ নিরাময়ে কাজ করে। ২০০২ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
পরিবার এবং শোকবার্তা
জিমি কার্টার ৪ সন্তান এবং ১১ নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী রোসালিন কার্টারও গত নভেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন। কার্টারের ছেলে চিপ কার্টার এক বিবৃতিতে বলেন, “আমার বাবা শুধু আমাদের পরিবারের নয়, সারা বিশ্বের শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য নিবেদিত নায়ক ছিলেন।”
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
কার্টারের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিভিন্ন দেশের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো বলেন, “কার্টার পানামার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন।”
এক জীবন, বহু উত্তরাধিকার
কৃষক থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী—জিমি কার্টারের জীবন ছিল বহু রঙে রাঙানো। তাঁর নৈতিকতা, মানবিকতা এবং কূটনৈতিক দূরদর্শিতা তাঁকে ইতিহাসে অনন্য করে তুলেছে।