সৈয়দ হাসসান ।।
রমজান শুধু সিয়াম সাধনার মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও নেক আমল বাড়ানোর উত্তম সময়। এই পবিত্র মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুসলমানদের উচিত প্রতিদিন ভালো কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা। সওয়াবের কাজ যত ছোটই হোক না কেন, যদি তা আন্তরিকতার সঙ্গে করা হয়, তবে আল্লাহ তায়ালা এর প্রতিদান দেন বহুগুণে। রমজানের ৩০ দিনে প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করলে একজন মুমিন ব্যক্তি যেমন আত্মিক উন্নতি সাধন করতে পারেন, তেমনই সমাজের জন্যও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন।
প্রতিদিন একটি করে উত্তম কাজ
রমজানে একজন মুমিন প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করার সংকল্প নিতে পারেন। নিচে ৩০ দিনের জন্য ৩০টি উত্তম কাজ উল্লেখ করা হলো—
- প্রথম দিন: গরিব ও অসহায় ব্যক্তিদের দান করা।
- দ্বিতীয় দিন: শুধু ইবাদত ও কোরআন তিলাওয়াত করা।
- তৃতীয় দিন: আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া ও তাদের পাশে দাঁড়ানো।
- চতুর্থ দিন: প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেওয়া ও প্রয়োজনে সাহায্য করা।
- পঞ্চম দিন: গুনাহের জন্য আন্তরিকভাবে তওবা করা।
- ষষ্ঠ দিন: গরিবদের ইফতার করানো।
- সপ্তম দিন: দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বা কাউকে আনন্দ দেওয়া।
- অষ্টম দিন: রাস্তা পরিষ্কার রাখা বা জনকল্যাণমূলক কাজ করা।
- নবম দিন: বিদআত ও কুসংস্কার বর্জন করা।
- দশম দিন: গোপনে সাদকা বা দান করা।
- একাদশ দিন: রোগীদের পাশে থাকা ও সেবা করা।
- দ্বাদশ দিন: ছোটদের স্নেহ করা ও বড়দের সম্মান করা।
- ত্রয়োদশ দিন: অন্যদের ভালো কাজে উৎসাহিত করা।
- চতুর্দশ দিন: নামাজের প্রতি আরও যত্নশীল হওয়া।
- পনেরোতম দিন: কাউকে ক্ষমা করে দেওয়া ও বিদ্বেষ দূর করা।
- ষোলোতম দিন: মৃত স্বজনদের জন্য দোয়া করা ও কবর জিয়ারত করা।
- সপ্তদশ দিন: হারাম ও অপচয় থেকে বিরত থাকা।
- অষ্টাদশ দিন: ইসলামি বই পড়া ও নতুন কিছু শেখা।
- উনিশতম দিন: মসজিদে দান করা বা মসজিদের কাজে সাহায্য করা।
- বিশতম দিন: গিবত ও মিথ্যা থেকে দূরে থাকা।
- একুশতম দিন: পিতা-মাতার সেবা করা ও তাদের জন্য দোয়া করা।
- বাইশতম দিন: বিনয়ী ও ধৈর্যশীল হওয়ার অভ্যাস গড়া।
- তেইশতম দিন: এতিম ও অসহায় শিশুদের সাহায্য করা।
- চব্বিশতম দিন: জীবনের হিসাব-নিকাশ করে আল্লাহর পথে ব্যয় বাড়ানো।
- পঁচিশতম দিন: রাগ ও অহংকার দূর করার চেষ্টা করা।
- ছাব্বিশতম দিন: আত্মসমালোচনা করা ও নিজের দোষত্রুটি সংশোধন করা।
- সাতাশতম দিন: লাইলাতুল কদরের জন্য সারারাত ইবাদতে কাটানো।
- আঠাশতম দিন: কোরআনের একটি সূরা মুখস্থ করার চেষ্টা করা।
- ঊনত্রিশতম দিন: জাকাত ও ফিতরা যথাযথভাবে আদায় করা।
- ত্রিশতম দিন: জীবনের উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করে আল্লাহর পথে আরও দৃঢ় হওয়া।
রমজান মাস হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে নেক আমলের প্রতিদান অন্যান্য মাসের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদের আত্মিক পরিশুদ্ধি ঘটাতে পারি এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি। রমজানের এই বরকতময় দিনগুলো যেন স্রেফ উপবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং আমরা যেন প্রতিদিনের সওয়াবের কাজের মাধ্যমে প্রকৃত মুত্তাকি হওয়ার চেষ্টা করি।