শনিবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৫

যে কারণে মানুষ মানুষকে ডিম ছুড়ে মারে

২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে রাজা তৃতীয় চার্লসের ওপরও ডিম নিক্ষেপ করা হয়। যদিও সেটি সরাসরি ক্ষতি করতে পারেনি, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং কমিউনিটি অর্ডারের সাজা দেওয়া হয়।

by ঢাকাবার্তা
ডিম ছুড়ে মারার জেনারেটেড প্রতীকী চিত্র

জীবনধারা ডেস্ক ।। 

ডিম—খাওয়ার টেবিলের একটি সাধারণ খাবার। কিন্তু রাজনীতি ও প্রতিবাদের মঞ্চে বহুবার এটি পরিণত হয়েছে প্রতীকী অস্ত্রে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, নানা সময় ভিন্ন ভিন্ন কারণে রাজনীতিবিদদের দিকে ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে মানুষ ডিম ছুড়ে মেরেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় ১৯১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজকে এক জনসভায় ডিম ছুঁড়ে আঘাত করা হয়েছিল। দেশজুড়ে কনস্যক্রিপশন বিরোধী আন্দোলনের উত্তাপেই সেই ঘটনা ঘটে, যা পরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিতর্ককে ঘনীভূত করেছিল।

ব্রিটেনে ২০০১ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে একজন তরুণ কৃষক ডিম নিক্ষেপ করলে প্রেসকট নিজেই ঘুষি মেরে প্রতিক্রিয়া দেখান। মুহূর্তটির ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিম ছোড়ার রাজনীতি নিয়ে আলোচনার জন্ম দেয়।

২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ১৭ বছর বয়সী উইল কনলি, যিনি ‘এগ বয়’ নামে পরিচিত, বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়া সেনেটর ফ্রেইজার এনিংয়ের মাথায় ডিম ছুঁড়েন। ওই ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়; কনলির প্রতি অনেকেই সমর্থন প্রকাশ করে, এমনকি অনুদানও তোলা হয়। ঘটনাটি ডিম ছোড়াকে প্রতিবাদের নতুন প্রতীকে পরিণত করে।

২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে রাজা তৃতীয় চার্লসের ওপরও ডিম নিক্ষেপ করা হয়। যদিও সেটি সরাসরি ক্ষতি করতে পারেনি, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং কমিউনিটি অর্ডারের সাজা দেওয়া হয়। এতে প্রমাণিত হয়, ডিম ছোড়া হাস্যরসাত্মক বা প্রতীকী মনে হলেও আইনত এটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ইউরোপের আরও অনেক দেশে, যেমন চেক রিপাবলিকে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতিকে ডিম ছোড়া হয়েছিল। কোথাও রাজনৈতিক ক্ষোভ, কোথাও সামাজিক বঞ্চনার প্রতিবাদ—ডিম ছোড়ার কাহিনি ইতিহাস জুড়েই ছড়িয়ে আছে।

কেন ডিম?

  • সহজলভ্য ও সস্তা: ডিম হাতের কাছেই থাকে এবং ছুঁড়ে মারা সহজ।
  • প্রতীকী অপমান: কারও গায়ে ডিম ভাঙা মানে তাকে জনসমক্ষে অসম্মান করা।
  • অ-ঘাতক কিন্তু তীব্র বার্তা: ডিম মারাত্মক ক্ষতি করে না, কিন্তু তাৎক্ষণিক লজ্জা ও আলোচনার জন্ম দেয়।
  • মিডিয়ায় প্রভাব: ছবি ও ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়, ফলে প্রতিবাদকারীর উদ্দেশ্য ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত।

আইনি ও নৈতিক দিক

যদিও অনেকেই এটিকে নিরীহ প্রতিবাদ মনে করেন, বাস্তবে ডিম ছোড়া অধিকাংশ দেশে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ, হামলা বা হুমকির অভিযোগে অভিযুক্তকে জরিমানা, কারাদণ্ড বা কমিউনিটি অর্ডারের মুখোমুখি হতে হয়।

অতএব, ডিম ছোড়া কখনো প্রতিবাদের প্রতীক, কখনো হাস্যরস, আবার কখনো আইনি জটিলতার কারণ। পৃথিবীতে যত রকম প্রতিবাদের পথ আছে, ডিম ছোড়া তার মধ্যে সবচেয়ে চিত্রনাট্যপূর্ণ ও বিতর্কিত একটি পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net