ডেস্ক রিপোর্ট ।।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (NSC) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সতর্ক করেছে, ভারতের পক্ষ থেকে যদি পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ বা বিভ্রান্ত করার কোনো প্রচেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটিকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সামিল বলে গণ্য করা হবে।
এই বিবৃতি এসেছে একটি উচ্চপর্যায়ের এনএসসি বৈঠকের পর, যেখানে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্তও অনুমোদিত হয়েছে। পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত যেসব একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে, তার পাল্টা জবাব হিসেবেই পাকিস্তানের এসব ঘোষণা।
এনএসসি ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো:
- সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিলের ভারতীয় একতরফা সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান
- পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ বা বিভ্রান্ত করলে তা যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে
- ভারতের সঙ্গে সমস্ত স্থলপথে চলাচলের জন্য ওয়াঘা সীমান্ত অবিলম্বে বন্ধ
- ভারতীয় মালিকানাধীন বা পরিচালিত সব ফ্লাইটের জন্য পাকিস্তানি আকাশসীমা বন্ধ
- ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করা হতে পারে
- ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা অব্যাহতি বাতিল
- পাকিস্তানে অবস্থানরত ভারতীয়দের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ
- ভারতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের ‘persona non grata’ ঘোষণা
- ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের স্টাফ সংখ্যা ৩০ জনে সীমিত
- ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ, তৃতীয় দেশের মাধ্যমেও নয়
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পেহেলগামের ঘটনার পর ভারতের নেওয়া পদক্ষেপগুলো একতরফা, অবিচারপূর্ণ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, চরম দায়িত্বহীন এবং আইনি ভিত্তিহীন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক নীতিমালা, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তিসমূহের লঙ্ঘন।
সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে ভারতের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে, এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তি, যার কোনও ধারায় একতরফাভাবে স্থগিত করার অনুমতি নেই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে:
“পানি হলো পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থের একটি কেন্দ্রবিন্দু, ২৪ কোটি মানুষের জীবনরেখা। এর ওপর কোনো হস্তক্ষেপ হলে জাতীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জবাব দেওয়া হবে।“
এনএসসি আরও জানিয়েছে, ওয়াঘা সীমান্তের সকল চলাচল বন্ধ থাকবে, এবং যেসব ভারতীয় নাগরিক বৈধ কাগজপত্র নিয়ে প্রবেশ করেছেন, তাদেরকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ফিরে যেতে হবে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের আকাশসীমা থেকেও ভারতীয় বিমান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি এবং সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এর একদিন আগেই ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা সেবা স্থগিত করে এবং দেশটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানিদের তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চলে যেতে নির্দেশ দেয়। দিল্লিতে পাকিস্তানি কূটনীতিকরা এই নির্দেশনার বাইরে থাকলেও, তাদের সংখ্যা হ্রাস করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রী সাংবাদিকদের জানান, পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা।
মিস্রী বলেন,
“সিন্ধু পানি চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হলো, যতক্ষণ না পাকিস্তান সুনির্দিষ্ট ও স্থায়ীভাবে সীমান্তপারের সন্ত্রাসে তার মদত বন্ধ করছে।”
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার পেহেলগামের ঘটনায় নিহত পর্যটকদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জানায়:
“ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় পর্যটকদের প্রাণহানিতে আমরা উদ্বিগ্ন। নিহতদের পরিবারদের প্রতি সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।“