কলকাতা প্রতিনিধি ।।
তিনি বড় মাপের নেতা নন, বক্তৃতারও অভিজ্ঞতা বিশেষ নেই। তবুও রবিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপিআইএমের ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের নেত্রী বন্যা টুডু ইতিহাস রচনা করলেন। প্রথম বক্তৃতাতেই স্পষ্ট বার্তা দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন শাসক দলকে। তাঁর ভাষ্য, “ওরা বলছে খেলা হবে, আমরা বলছি এবার খেলব আমরাও। ব্যাটও ধরব, বলও করব, উইকেটও ফেলব ছাব্বিশে।”
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের প্রথম বড় সমাবেশে, যেখানে শ্রমিক, ক্ষেতমজুর ও বস্তির মানুষজনই মঞ্চ দখল করেছিলেন, সেখান থেকেই বন্যার হুঙ্কার — “দু’টো সরকার চলছে— একটা ডাকাতের, একটা চোরের। যারা জমি কেড়ে নিতে আসবে, তাদের রুখতে হবে আগুন জ্বালিয়ে।”
সভা শেষে, বাকি কর্মীদের সঙ্গে মাঠ পরিষ্কার করতেও দেখা যায় তাঁকে — হাতে ঝাঁটা নিয়েই।
প্রায় ১১ মিনিটের ভাষণে বন্যা টুডু একদিকে যেমন তুলে ধরলেন তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ, তেমনি তুলে ধরলেন নিজেদের সংগ্রামের কথাও। বললেন, “আমরা দু’কিলো চাল কিনি, ১২০ টাকায় মজুরি খাটি। একসময় ভূমিহীনদের জমি দিয়েছিল বাম সরকার, আজ তা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা সেটা রুখে দেব।”
তিনি শহর ও গ্রামের বৈষম্যের প্রসঙ্গ টেনে বললেন, “ভোট আর পেটের খিদে এক জিনিস নয়। তাই ভয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কটাক্ষ করে বলেন, “৫ টাকার চপ বিক্রি করে বাড়ি হয় কীভাবে?”
বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রবিবারের ব্রিগেডে ছিল এক অন্যরকম উত্তেজনা। বক্তার তালিকায় বড় নাম না থাকলেও, বন্যা টুডুর বক্তৃতায় জনতার উত্তাল সাড়া প্রমাণ করে দিল — বামেদের নতুন ভরসা হতে পারেন তিনিও। সভার সময়ই সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তাঁর বক্তৃতায় উদ্ধৃত করেন বন্যাকে। মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও মঞ্চের অদূরে দাঁড়িয়ে বন্যার বক্তৃতায় করতালি দেন।

বন্যা টুডু, ব্রিগেডে অতিথির সারিতে।
যেখানে পুরনো বক্তাদের বক্তৃতায় কম সাড়া, সেখানে বন্যার কথায় সভাস্থল বারবার গর্জে ওঠে। সিপিএমের এক তরুণ নেতার মন্তব্য, “নতুন মুখের জন্যই ভিড়ের উচ্ছ্বাস।”
সিপিএম নেতৃত্বের তরফে মহম্মদ সেলিমও এদিন ব্রিগেড থেকে শাসক তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই তীব্র আক্রমণ শানান। মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক অশান্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “সরকার চাইলে দাঙ্গা হয়, সরকার না চাইলে হয় না। তৃণমূল ও বিজেপি মিলে মানুষকে বিভাজন করছে।”
তিনি জানান, “দাঙ্গাবাজদের ঠেকাতে লাল ঝান্ডাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
হুগলির গুড়াপের বাসিন্দা বন্যা টুডু — পেশায় ক্ষেতমজুর, বাড়িতে চারটি ছাগল আর পরিবার। মাঠে ছাগল চরানো আর ঘাস কাটার ফাঁকেই তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের রাজনৈতিক পরিচয়। সিপিএমের হুগলি জেলা কমিটির সদস্য ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তিনি। ২০০৬ সালে সিপিএমের সদস্য হন। তাঁর আবির্ভাবের পেছনে ছিলেন প্রয়াত সিপিএম নেতা রূপচাঁদ পাল।
বক্তৃতার শেষে বন্যা টুডুর আহ্বান: “এখান থেকে ফিরে গিয়ে বুথে বুথে কাজ করতে হবে। আমরা ভয় পাব না, যারা চুরি করেছে তারাই ভয় পাবে। খেলা আমরাও করব। ব্যাটও করব, বলও করব, উইকেটও ফেলব ছাব্বিশে।”