বিনোদন ডেস্ক ।।
তানিম নূর পরিচালিত ঈদের চলচ্চিত্র ‘উৎসব’ দর্শকমনে গভীর ছাপ ফেলেছে। ১৩ জুন ২০২৫ তারিখে স্টার সিনেপ্লেক্সে ছবিটি দেখতে গিয়ে লেখক ও তাঁর বন্ধুদের অভিজ্ঞতা ছিল আবেগঘন, রসাত্মক ও বাস্তবতাপূর্ণ। ভিড়, টিকিট কাটা, দীর্ঘ অপেক্ষার পর হলে ঢুকে দেখা মিলল একটি সাদাসিধে অথচ হৃদয়বিদারক গল্পের, যা একসময় চোখের জলও টেনে নেয়।
চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন জাহিদ হাসান, যিনি ভূতের রূপে হাজির হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান ও অপি করিম। নাটকীয়তা, হাস্যরস আর আবেগের মিশেলে গড়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী গল্প, যেখানে কিশোর প্রেম, পারিবারিক টানাপোড়েন এবং জীবনের ক্ষুদ্র অথচ গভীর অনুভূতিগুলো অনবদ্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
চিত্রনাট্যে সাদিয়া আয়মান ও সৌম্য জ্যোতির অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছোট ছোট মুহূর্তে নির্মাতা যে আবেগ ও সংবেদনশীলতা ফুটিয়ে তুলেছেন, তা বাংলা সিনেমার সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরল। বিশেষ করে ‘এক কাপ কফির দাম তিন শ টাকা’ সংলাপে জাহিদের হাসি কিংবা অপু ট্রিলজির প্রসঙ্গ টেনে আনা তুলনাগুলো লেখকের মনে গভীর আলোড়ন তোলে।
চলচ্চিত্রের আরও শক্তিশালী দিক ছিল চরিত্রগুলোর ব্যতিক্রমী উপস্থাপন। জয়া আহসান এখানে ছিলেন একটু প্রগলভ ভূতের ভূমিকায়, যা তাঁর পূর্বপরিচিত চিত্র থেকে আলাদা। অপি করিমের সংযত অভিনয়, মিমি, দিনার, তারিক আনাম সবার অভিনয় ছিল পরিমিত ও প্রাসঙ্গিক।
ছবিটি শেষ হওয়ার পর দর্শক উঠে পড়ছিল না, হলে হাততালির শব্দে ভরে উঠেছিল পরিবেশ। যদিও ‘উৎসব’ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের দৌড়ে না-ও থাকতে পারে, তবে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার সমস্ত উপাদান ছবিটিতে রয়েছে। সিনেমায় নেই আইটেম গান, অ্যাকশন দৃশ্য বা চটকদার রংঢং—তবে আছে ছোট ছোট ব্যথা আর আবেগঘন মুহূর্তে জীবনকে দেখার আরেক দৃষ্টিভঙ্গি।
লেখকের চোখে ‘উৎসব’ একটি হৃদয়জুড়ানো ছবি। স্মৃতি, সম্পর্ক, বেদনা ও ভালোবাসার সংমিশ্রণে গড়া এই ছবির সবচেয়ে বড় শক্তি এর স্ক্রিপ্ট এবং পরিচালকের পরিমিতিবোধ। লেখক একাধিকবার হেসেছেন, কেঁদেছেন, এবং শেষতক অনুভব করেছেন নিজের বাবাসত্তাও।
এই ছবি মনে করিয়ে দেয়, ভালো সিনেমা সবসময় বড় ক্যানভাস বা বিখ্যাত মুখের উপর নির্ভর করে না—নির্ভর করে সত্যিকারের গল্প বলার দক্ষতা এবং আবেগ ছুঁয়ে যাওয়ার ক্ষমতার উপর। এই ছবি আমাদের জানিয়ে দেয়, বাংলা সিনেমা এখনও আশাব্যঞ্জকভাবে বেঁচে আছে।