প্রোফাইল ডেস্ক ।।
আন্তোনিও ম্যানুয়েল দে অলিভেইরা গুতেরেস ৩০ এপ্রিল ১৯৪৯ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি মধ্যবিত্ত ক্যাথলিক পরিবারে বড় হন। শিক্ষাজীবনে তিনি লিসবন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে পদার্থবিদ্যা ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার পাশাপাশি তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে আন্দোলনে যুক্ত হন।
গুতেরেস ১৯৭৪ সালে পর্তুগালে স্বৈরশাসনের পতনের পর সমাজতান্ত্রিক দলে (Socialist Party) যোগ দেন। তিনি ধাপে ধাপে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্নীত হন এবং ১৯৯২ সালে দলটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৫ সালে পর্তুগালের সাধারণ নির্বাচনে সমাজতান্ত্রিক দল বিজয়ী হয় এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শাসনামলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তিনি গরিব মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পর্তুগালের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেন। তার শাসনামলে শ্রম সংস্কার, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক কার্যক্রম নেওয়া হয়।
২০০২ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি জাতীয় রাজনীতি থেকে সরে আসেন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গুতেরেস আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করতে আগ্রহী হন। ২০০৫ সালে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (UNHCR) হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘাতের ফলে সৃষ্ট শরণার্থী সংকট সামলাতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেন। তার অধীনে UNHCR সংস্থাটি মানবিক সহায়তার জন্য নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করে, যা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়।
২০১৬ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে বান কি-মুনের স্থলাভিষিক্ত হন আন্তোনিও গুতেরেস। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তিনি জাতিসংঘের নবম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তার নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন, শান্তি রক্ষা, মানবাধিকার এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের ভূমিকা আরও জোরালো হয়।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তন রোধের জন্য বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন চুক্তি বাস্তবায়নে জোর দেন। এছাড়া, কোভিড-১৯ মহামারির সময় তিনি বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন সমতা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
২০২২ সালে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হন। তার দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবাধিকার রক্ষা এবং যুদ্ধ-সংঘাত প্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে জাতিসংঘের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গুতেরেস সর্বদা ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং সমতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি একজন ধর্মপরায়ণ ক্যাথলিক এবং জনসেবামূলক কাজে নিবেদিতপ্রাণ। তিনি বিশ্বাস করেন যে বিশ্ব শান্তি এবং মানবতার উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সংহতি অপরিহার্য।
তার নেতৃত্বে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি সবসময় দুর্বল ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে থাকার কথা বলেন এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে চলেছেন।
আন্তোনিও গুতেরেস একজন দূরদর্শী ও মানবতাবাদী নেতা, যিনি পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে জাতিসংঘ মহাসচিব পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তার নেতৃত্বে জাতিসংঘ আজ এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যেখানে মানবাধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।