সাদ রহমান ।।
গভমেন্টের ওয়েবসাইটগুলাতে ঢুকলে মনে হয় প্রস্তরযুগে আইসা পড়ছি। কোনধরনের তথ্য এইসব ওয়েবসাইট থেকে উদ্ধার করা সম্ভব না। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটগুলোতে উপদেষ্টা আর সচিবের ছবি বাদে কিছুই সেখানে নাই।
ক্যানো?
একটা বিশ কোটি মানুষের দেশে এই ডিজিটাল যুগে বইসা আমরা সরকারের কার্যক্রম অনলাইন থেকে জানতে পারবো না? নাকি এই জানার অধিকার আমাদের নাই?
এখন থেকে ‘খোলা দরপত্র’ ছাড়া হবে ধরনের সুন্দর সুন্দর কথা বলেন আমাদের মন্ত্রীরা। কিন্তু যদি স্বচ্ছতা আর সরকারি তথ্য প্রাপ্তির সহজতা নিশ্চিত না হয়, তাহলে এইসব ঘোষণা দিয়া আদৌ কিছু হবে কি?
সুন্দর সুন্দর কথা বইলা পাবলিককে আহ্লাদ দেওয়ার দরকার কি?
চিফ অ্যাডভাইজারের একটা ফেসবুক পেইজ বাদে এই সরকারের আর কোথাও কোন ডিজিটাল ট্রান্সপারেন্সি নাই। যা খুবই লজ্জাজনক।
আমরা চাইলেও জানতে পারি না সরকার কী করতেছে, কী করতে চায়, কোন মন্ত্রণালয়ে কী কর্মকাণ্ড চলে, কতো টাকা কোথায় কীভাবে খরচ হয়—ইত্যাদি।
অথচ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় কথা হইলো ট্রান্সপারেন্সি, স্বচ্ছতা।
স্বচ্ছতা না থাকলে কোনদিনও নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। কোনদিনও করাপশন বন্ধ হবে না, এবং কোনদিনই সরকারি চামচারা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে না।
গণঅভ্যুত্থানের হাত ধইরা আসা একটা সরকারের এই সরল হিসাবটা বুঝতে না পারা লজ্জার, এবং হতাশার। এই সরকার ডিজিটাল ট্রান্সপারেন্সিকে তার প্রায়রিটি লিস্টে রাখে নাই।

নাহিদ ইসলাম। ছবি, রাজিব ধর
আমাদের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আদৌ তথ্য জিনিসটার গুরুত্ব অনুভব করেন বইলা মনে হয় না। অথচ একজন ইয়াং লিডার হিসাবে তথ্যের মতো বিষয়ে কাজ করাটা তার জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হইতে পারতো।
বিদেশি পত্রপত্রিকায় আমরা প্রায়শই তরুণ লিডারদের গল্প পড়ি, যারা সরকারি ব্যবস্থাকে আধুনিক ও কার্যকর কইরা তুলতে নানাভাবে কাজ কইরা যাইতেছেন। আমাদের তরুণ নেতাদের কাছেও আমরা ঠিক একইরকম উদ্যোগ ও পরিবর্তনের প্রত্যাশা করি।
এইটা তাদেরকে বুঝতে হবে।
২.
এই সরকার পাঁচ মাস অতিক্রম কইরা ফেলছে। আর পাঁচ মাস অতিক্রম করলেই নির্বাচনের ডঙ্কা বাইজা উঠবে। আল্টিমেটলি, তারপরে নির্বাচিত সরকার হিসেবে বিএনপি আসলে এইসব ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করাকে বিএনপি দায়িত্ব হিসাবে নিবে না।
তার কারণ, ভোটের ম্যান্ডেট বিএনপিকে এমনিতেই অনেক প্রশ্ন থেকে মুক্তি দিয়া দিবে। পুরোদমে আবার সরকারি স্বেচ্ছাচারিতা শুরু হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের চাহিদার জায়গাটা হইলো—তারা একটা সিস্টেমেটিক পরিবর্তন নিয়া আসবেন পুরা সরকারি ব্যবস্থায়। যেহেতু তাদের নিজস্ব কোন এজেন্ডা বা রাজনীতি নাই, ফলে দেশের মানুষের হইয়া তারা কাজটা কইরা যাবেন।
যদি বর্তমান সরকার আমাদের সরকারি ব্যবস্থাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়, তবে ভবিষ্যতে এইটা আর কখনোই আসার সম্ভাবনা নাই।
ইদানিং একটা বিষয় দেখতে পাচ্ছি, সরকারে থাকা তরুণ নেতাদেরকে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র থেকে ডিসপ্লেসড কইরা দেওয়া হইছে। ফলে তরুণদের সরকারে তরুণদেরকেই আর দেখা যাইতেছে না। এইগুলা ভালো সংকেত না।
তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সরকারি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন কোনোভাবেই সম্ভব না। একমাত্র তরুণ নেতৃত্ব চাইলেই এইটা সম্ভব হবে। কাজেই তরুণ নেতৃত্বকে আমি আবার সামনে আগাইয়া আসার অনুরোধ করবো।
বাংলাদেশের সরকার-ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করে তোলার দায়িত্ব তাদেরই।
বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা যারা আছেন—যেমন জিয়া হাসান—তারা এইসব ‘তরুণ স্বপ্ন’ জাতীয় জিনিসে বিশ্বাস করেন না। উনারা চান, যথাদ্রুত এই সরকারের বিদায় এবং বিএনপির আগমন। এবং তারপরে বিএনপির অ্যাডভাইজারি বোর্ডে তাদের গণমান্য বিচরণ।
ফলে তরুণদের আগাইয়া আসাকে এই বুদ্ধিজীবীরা সেভাবে সাধুবাদ জানাইবেন না। তা সত্ত্বেও, তরুণদেরকে আগাইয়া আইসা কাজগুলা করতে হবে।
৩.
সরকারেকে বলবো, দুর্নীতি দমনের জন্য দুদক-কে যতো গুরুত্ব দিবেন, তার চাইতে বেশি গুরুত্ব দিয়েন সরকারি তথ্যের অবাধকরণে। যাতে সাংবাদিকরা তো বটেই, সাধারণ নাগরিকেরাও মোবাইল থেকে সরকারের খরচাখরচ বিস্তারিত দেখতে পারে।
শুধু দুর্নীতি দমন না, অপরাধ দমনের বেলাতেও একই কথা।
মানুষের অভিযোগগুলা যেনো সরকারের কাছে পৌঁছায় তার ব্যবস্থা করেন। সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর জন্য মানুষ জায়গা খুঁইজা পায় না, পুলিশের ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর পথ নাই, ফলে কার্যকর ডিজিটাল অভিযোগ বাক্স খুলেন।
সরকারের তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছানোর পাশাপাশি, মানুষের তথ্যও সরকারের কাছে নিয়া আসেন।
সহজ তথ্য নিশ্চিত করার জন্য সহজ ইউজার এক্সপেরিয়ান্স এবং সহজ বাংলা দুইটাই দরকার হবে। সেজন্য ভালো বাংলা পারা লোকজন ও ভালো ডেভেলপার-ডিজাইনারদেরকে নিয়া এখনই কাজ শুরু কইরা দেন।
‘সহজ তথ্য’ নিশ্চিতের সঙ্গে সঙ্গে ‘তথ্যের স্বাধীন অনুশীলন’ও নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কীভাবে হবে তাও এই সরকারকে ভাইবা দিয়া যাইতে হবে।
তার জন্য, অলিগার্ক-শাসিত মিডিয়া আউটলেটগুলার বাইরে সম্ভাবনাময় অল্টারনেটিভ মিডিয়াকে ফুয়েল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সাদ রহমান
আগামী এক বছরে অন্তত দশ হাজার ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর গইড়া দিয়া যান। ইয়াংদেরকে জার্নালিজম প্রশিক্ষণ দেন, সরকারি খরচে কন্টেন্ট ক্রিয়েটিং শিখার ব্যবস্থা করেন।
স্বাধীনভাবে মিডিয়া চালানোর চেষ্টা করে এমন কুটির মিডিয়াগুলোকে সাহায্য করেন। ঢাকায় এবং মফস্বলে দুইখানেই।
কীভাবে তারা সহজে সরকারি বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা পাবে সেই পথ বাতলাইয়া দেন এবং তার ব্যবস্থা করেন।
ফেসবুকে সাদ রহমানের পাবলিক পোস্ট