ডেস্ক রিপোর্ট ।।
ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে পঞ্চম দিনের দুপুরে হাসান মুরাদের বল স্টাম্পে লাগতেই শেষ হয়ে গেল আয়ারল্যান্ডের প্রতিরোধ। ম্যাথিউ হামফ্রিস বোল্ড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বাংলাদেশের উচ্ছ্বাস। আর একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অটল কার্টিস ক্যাম্ফারকে সান্ত্বনা দেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম—কারণ যেভাবে তিনি লড়াই করেছেন, তার জন্য সম্মান প্রাপ্য ছিলই।
বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় টেস্ট ২১৭ রানে জিতে সিরিজও ২–০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে। তবে শেষ বিকেলের সেই সরল সমীকরণের আগে আয়ারল্যান্ড বেশ ভালোই পরীক্ষা নিয়ে গেছে। চতুর্থ ইনিংসে ৫০৯ রানের লক্ষ্যে নেমে তারা করেছে ২৯১, খেলেছে ১১৩.৩ ওভার—মিরপুরে সফরকারী দলের সর্বোচ্চ ইনিংস রানের রেকর্ড। শেষদিনে হাতে মাত্র চার উইকেট নিয়েও তারা টিকেছে ৫৯.৩ ওভার।
- মিরপুরে ২১৭ রানে জিতে সিরিজে ২–০ ব্যবধানে জয় বাংলাদেশ দলের
- মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, ম্যাচসেরার স্বীকৃতি
- তাইজুল ইসলামের ঝলক, সিরিজে ১৭ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা
- ক্যাম্ফারের ২৫৯ বলের লড়াইও বাঁচাতে পারেনি আয়ারল্যান্ডকে
- হাসান মুরাদের জোড়া আঘাতে পঞ্চম দিনে ম্যাচের নিষ্পত্তি
- চতুর্থ ইনিংসে মিরপুরে সফরকারী দলের সর্বোচ্চ রান করেও হার এড়াতে ব্যর্থ আইরিশরা
দিন শুরু হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের ৬ উইকেটে ১৭৬ রান নিয়ে। ক্রিজে ছিলেন ৩৪ রানে অপরাজিত কার্টিস ক্যাম্ফার এবং তার সঙ্গী অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। তাইজুল ইসলাম দিনের তৃতীয় ওভারেই ম্যাকব্রাইনকে এলবিডব্লিউ করে নেন—আর এ উইকেটেই ছুঁয়ে ফেলেন টেস্টে তার ২৫০ উইকেটের মাইলফলক। সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলে আগেই হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটশিকারি।
এরপর ক্যাম্ফারের সঙ্গে জুটি গড়েন জর্ডান নিল। কিছুক্ষণ লড়াই করেও মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন নিল (৩০)। তবে বিপদ বাড়ল তখনই, যখন লাঞ্চের আগে বাকি উইকেট দুটো নিতে না পারায় বাংলাদেশের ড্র-শঙ্কা মাথা তুলে দাঁড়াল।

সাকিবের উইকেট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে তাইজুল
লাঞ্চের পর ক্যাম্ফার ও গ্যাভিন হোয়ে বাংলাদেশকে আরও ভোগান। এক প্রান্তে ক্যাম্ফারের ক্লাসিক টেস্ট ব্যাটিং—অফড্রাইভ, ডিফেন্স, মাঝে মাঝে বাউন্ডারি। আর অন্যপ্রান্তে দশ নম্বরে নামা হোয়ে ১০৪ বলের ধৈর্যশীল ৩৪ রান। দুজন মিলে খেলেন ১৯০ বলের বেশি।
বাংলাদেশের স্পিন–পেস–ফিল্ড—কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। নাজমুল হোসেন শান্তদের মুখে তখন চাপের ছাপ স্পষ্ট।
যে মুহূর্তে মনে হচ্ছিল ম্যাচ আরও দীর্ঘ হবে, তখনই হাসান মুরাদ এসে জ্বলে উঠলেন। ক্যাম্ফার–হোয়ের ১৯১ বলের জুটির ইতি টানলেন তিনি, হোয়েকে এলবিডব্লিউ করে। এরপরই পরের বলে ম্যাথিউ হামফ্রিসকে বোল্ড করে ম্যাচ শেষ করে দেন।
ক্যাম্ফার ২৫৯ বল খেলে অপরাজিত ৭১—আইরিশ টেস্ট ইতিহাসে কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ বল খেলার রেকর্ড। মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে এত বল খেলার নজিরও নেই।

শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে সাজঘরে ফিরছেন মুশফিকুর রহিম
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মুরাদ ৪ উইকেট, তাইজুলও ৪ উইকেট নেন। মিরাজ পান ২টি।
এই ম্যাচের সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরমার অবশ্য মুশফিকুর রহিম। নিজের ১০০তম টেস্টে দারুণ এক সেঞ্চুরি (১০৬) করেছেন তিনি। সিরিজের সেরা হয়েছেন তাইজুল ইসলাম—দুই ম্যাচে সংগ্রহ ১৭ উইকেট।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৭৬ (লিটন ১২৮, মুশফিক ১০৬) এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৭/৪ ডিক্লেয়ার করে। আয়ারল্যান্ড করে ২৬৫ ও ২৯১।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে জেতালো অভিজ্ঞতার সঙ্গে তরুণদের সাহসী পারফরম্যান্স—আর ক্যাম্ফারকে অভিনন্দন জানাতে ভুলল না কেউই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৭৬ ও ৬৯ ওভারে ২৯৭/৪ ডিক্লেয়ার
আয়ারল্যান্ড: ২৬৫ ও ২৯১
ফল: বাংলাদেশ ২১৭ রানে জয়ী
সিরিজ: বাংলাদেশ ২–০
ম্যাচসেরা: মুশফিকুর রহিম
সিরিজসেরা: তাইজুল ইসলাম