স্টাফ রিপোর্টার ।।
বিসিবি (BCB) সভাপতি হওয়ার পর আজই প্রথম মাঠে এসে বাংলাদেশ দলের খেলা দেখলেন ফারুক আহমেদ (Faruque Ahmed)। একসময় নিজে খেলেছেন। মাঠের বাইরে থেকে খেলা দেখেছেনও অনেক। লম্বা একটা সময় তো প্রধান নির্বাচকের চোখ দিয়েই দেখেছেন।
অভিজ্ঞতাটা যে সুখকর হয়নি, তা তো বুঝতেই পারছেন। বোর্ড সভাপতি ফারুক দেখলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের (Zahur Ahmed Chowdhury Stadium) ব্যাটিং উইকেটে দুই ইনিংস মিলিয়ে এক দিনেই বাংলাদেশ হারাতে পারে ১৬ উইকেট! তৃতীয় দিন শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে শান্তবাহিনীর টেস্ট হার নিশ্চিত হয়ে যায় ইনিংস ও ২৭৩ রানের ব্যবধানে। টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) এটাই সবচেয়ে বড় জয়।
তাতে পরশু রাতে চট্টগ্রামে আসা ফারুক আহমেদ খেলা দেখতে পারলেন মাত্র এক দিন। দিনের শেষ বেলায় তাঁর হাতে থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়েছে বাংলাদেশকে ২-০–তে ধবলধোলাই করে জেতা সিরিজের ট্রফি।
বাংলাদেশ কাল দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩৮ রান করে। আজ প্রথম এক ঘণ্টায় সেটি আরও এলোমেলো। মধ্যাহ্নবিরতির সময় ফারুক যখন প্রেসবক্সে ঢুকলেন, তার বেশ আগেই বাংলাদেশ হারিয়ে বসে আরও ৪ উইকেট। স্কোর ৮ উইকেটে ১৩৭ রান। ফলো অন এড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরেকবার ব্যাটিংয়ে নামানোর আশা তখনই শেষ। বিসিবি সভাপতির কণ্ঠে হতাশা, ‘ওপেনারদের কাজ বলের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করে দেওয়া। কিন্তু তার আগেই আমরা ৭–৮ উইকেট হারিয়ে বসেছি!’
মধ্যাহ্নবিরতির পর ৩৭ মিনিটে ৮.২ ওভার ব্যাটিং করে ১৫৯ রানে প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। রানটাকে এখন কম মনে হলেও ওই সময় মনে হচ্ছিল এটাই তো অনেক! বাংলাদেশের অষ্টম উইকেট যে পড়ে গিয়েছিল ৪৮ রানেই! ৪ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে মাত্র ১০ রান যোগ করতেই নেই আরও ৪ উইকেট। আগের দিন ২ উইকেট নেওয়া কাগিসো রাবাদা (Kagiso Rabada) আজ সকালে দুর্দান্ত এক স্পেলে আরও তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে নিজের উইকেটসংখ্যাটা নিয়ে যান পাঁচে।
তবে লেজেগোবরে ব্যাটিংয়ের জন্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই বেশি দায়ী। ব্যাটিং উইকেটেও দক্ষতার প্রায়োগিক ভুলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে ইনিংস। কেউ হয়তো যে বল ছাড়া যেত, সেটাতে শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন। কেউবা যে বল ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ, উইকেট দিয়েছেন সেটা ছাড়তে গিয়ে। কেউ আবার ভুল শট খেলে আউট।
ব্যতিক্রম মুমিনুল হক (Mominul Haque) ও তাইজুল ইসলাম (Taijul Islam)। নবম উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার অপেক্ষা বাড়িয়ে দেয় তাদের ১১১ রানের জুটি। ১১২ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলা মুমিনুল তো মুতুসামির (Senuran Muthusamy) বলে এলবিডব্লু হওয়ার আগে সেঞ্চুরির সুবাসও পেতে শুরু করেছিলেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে কেশব মহারাজের (Keshav Athmanand Maharaj) হাতে ফিরতি ক্যাচ দেওয়া তাইজুল করেছেন ৯৫ বলে ৩০ রান।
প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশকেই আরেকবার ব্যাটিংয়ে ডাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। উইকেটে বল টার্ন করা শুরু করেছিল, ওদিকে ব্যাটসম্যানরাও করে চলেছিলেন প্রথম ইনিংসের ভুলের পুনরাবৃত্তি। সবারই যেন তাড়া, ম্যাচটা যে করেই হোক তৃতীয় দিনে শেষ করতে হবে!
তাতে দিন শেষে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ইনিংসে গতকাল শেষ বিকেলের মিনিট চল্লিশেকের ব্যাটিংয়ে আউট হওয়া চার ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম (Sadman Islam), জাকির হাসান (Zakir Hasan), মাহমুদুল হাসান (Mahmudul Hasan) ও হাসান মাহমুদ (Hasan Mahmud) ছাড়া বাংলাদেশ দলের বাকি সব ব্যাটসম্যানই আজ এক দিনে দুবার করে আউট হয়েছেন। তার মধ্যে প্রথম ইনিংসে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া মুমিনুল দুবারই আউট হয়েছেন আজ দ্বিতীয় সেশনে। এবার ২ বল খেলে তাঁর ব্যাট থেকে রান আসেনি একটিও।
প্রথম ইনিংসে দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলেছেন তাইজুল। ১৪৩ রানে অলআউট হওয়া দ্বিতীয় ইনিংসে দলীয় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৮ রান করে সে ভূমিকায় অবতীর্ণ ৯ নম্বরে নামা হাসান মাহমুদ। ৯৪ রানে ৮ উইকেট পড়ার পর নবম উইকেটে মাহিদুলের (Mahidul Islam Ankon) সঙ্গে ইনিংস–সর্বোচ্চ ৩৭ রানের জুটি গড়েন হাসান।
তার আগে ৪৭ রানে পঞ্চম উইকেট পড়ার পর ষষ্ঠ উইকেটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন (Najmul Hossain Shanto) (৩৬) ও অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলামের (২৯) ২৩ রানের জুটি গড়েছিলেন।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা ৫ উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ভুগেছে স্পিনে। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ (৫/৫৯) ও সেনুরান মুতুসামি (৪/৪৫) মিলে নিয়েছেন ৯ উইকেট।