হাবিবুর রহমান ।।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামি মূলত আন্তর্জাতিক সংগঠনের একটা চ্যাপ্টার। তারা গ্লোবালি বিস্তৃত। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কোনো বড়ো ইভেন্টে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিক্রিয়া দেয়। ছাত্র ইউনিয়নের বা বাম জোটের বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের এআইএসএফ থেকে বিবৃতি দেয়।
একইভাবে জামায়াত এবং শিবিরের সাথে পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন সংগঠনের সরাসরি যোগাযোগ আছে। তাদের বুদ্ধি, পরামর্শ, রিসোর্স, স্ট্রাটেজি অনেককিছু বিদেশ থেকে আসে।
ভূরাজনৈতিক কারণে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ভারতের কাছ থেকে সব ধরনের সাপোর্ট পায়।
কিন্তু লিবারেল ডেমোক্রেটিক পলিটিক্যাল পার্টি হয়েও বিএনপির কোনো ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের পার্টনার নাই। অথচ বিএনপির জন্য সম্পর্ক তৈরি করা সবচেয়ে সহজ। বিএনপি যে কাউকে সহজে ধারণ করতে পারে। এই বিষয়গুলো ছাত্রদলের আয়ত্তের বাইরে। এই বিষয়গুলো ছাত্রদলের চিন্তার মধ্যেই আসে না। ছাত্রদলকে কখনোই এভাবে গ্রুমিং করা হয় নাই। আবার এত কিছু বুঝতে গেলে তাদের জন্য ছাত্রদল করা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিস বাংলাদেশে এসে যে তদন্ত করল সেখানে ছাত্রলীগের স্টেটমেন্ট আছে। ছাত্রলীগের সভাপতির বক্তব্য আছে। শিবিরের স্টেটমেন্ট আছে। তাদের রেসপন্স আছে। কিন্তু এত বড়ো রিপোর্টে ছাত্রদল শব্দটাই নাই। কিন্তু ছাত্র সংগঠন হিসেবে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে ছাত্রদলের। কিন্তু এই আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টসে ছাত্রদলের কোনো নাম ঠিকানা নাই।
বিএনপির সাথে তদন্ত টিমের মিটিং হয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেখানে ছাত্রদলকে যুক্ত করে নাই। ছাত্রদলের সাথে টিমের কোনো কানেকশনের ব্যবস্থা করে নাই।
বিরোধী দলীয় রাজনীতি আপাতত শেষ। এখন আর হরতাল অবরোধের পারফর্মেন্স বা রাজপথের লড়াকু সৈনিকের ইমেজ দিয়ে রাজনীতিতে ভালো করা যাবে না। বিশেষ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে।
এক্ষেত্রে ছাত্রদলকে ইন্টেলেকচুয়ালি এনরিচ হতে হবে। ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে সফিস্টিকেটেড পলিটিক্স করতে হবে। একটা সংগঠন নিরবে নিভৃতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে কিন্তু কেউ টের পাচ্ছে না। কিন্তু আরেকদিকে কাউকে পঞ্চাশ টাকার খিচুড়ি দিয়ে ফেসবুকে ছবি তুলে ক্যাপশন দিচ্ছে, চেয়ারম্যানের নির্দেশে পথচারীদের খিচুড়ি খাওয়ালেন আক্কাস ভাই। এর অর্থ হয় দুইটা, নিজে নিজে খিচুড়ি খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও আক্কাস ভাইয়ের নাই; অন্যদিকে, চেয়ারম্যানকেও যদি এইসব তুচ্ছ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে হয় তাহলে দেশ চালানোর সময় কোথায়।
এখনকার দিনে একাডেমিক এবং কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসে ভালো পারফর্মেন্স ছাড়া শুধু ছাত্রনেতা পরিচয়ে ভোট পাওয়া যাবে না। কিন্তু ছাত্রদলকে এই ফিল্ডে গ্রুমিং করবে কে? আপাতত ছাত্রদলের নতুন কর্মীদের স্বশিক্ষিত বা সেল্ফ মেইড হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প আমি দেখি না।
শিবির গত এক বছরে অন্তত বিশটা শ্যাডো অর্গানাইজেশন চালিয়েছে ক্যাম্পাসে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অন্তত একশ পাবলিক লেকচার বা পলিসি ডায়লগ হয়েছে। কিন্তু বিএনপি বা ছাত্রদলের ব্যাকড কোনো অর্গানাইজেশন এরকম একটা প্রোগ্রামও আয়োজন করে নাই। ব্যক্তি উদ্যোগে গঠিত দুই তিনটা প্ল্যাটফর্ম ভালো করছে। কিন্তু পার্টির সুনির্দিষ্ট প্ল্যান ছাড়া সবাইকে এতে ইনভলভ করা সম্ভব না।
ছাত্রদলের সবচেয়ে রুট লেভেলের যারা কর্মী বা হল পর্যায়ের নেতাকর্মী আছে তাদের জন্য এখন থেকেই নিজের স্কিল বিল্ডআপের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভালো করতে হলে ক্যাম্পাসে নিজের ব্যক্তিগত সোশ্যাল স্ট্যাটাস বৃদ্ধি করতে হবে। ওপর থেকে উদ্যোগ নেওয়ার অপেক্ষায় না থেকে নিচ থেকে প্রেশার তৈরি করতে হবে। ছাত্রদল নিজেই বারবার ঘোষণা দিয়েছে কোনো ক্যাম্পাসেই পেশীশক্তির রাজনীতি চলবে না। তাই ছাত্রদলের হল এবং ইউনিভার্সিটি ইউনিটগুলোর সুপার টু পজিশনে ইন্টেলেকচুয়ালি সুপিরিয়র শিক্ষার্থীদের জায়গা দিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে বিপদ আসবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের একজন নেতার সুপার ফাইভে পোস্ট পাওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো এক্সপোজার নাই কোথাও। সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরেই কেবল মানুষ প্রথম চিনে।
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেককিছু নিয়ন্ত্রণ করে জাসদ ছাত্রলীগের একটা গ্রুপ। কিন্তু বাইরে থেকে বোঝা যায় না। যেমন: বর্তমানে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ জাসদ ছাত্রলীগ করতেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্যার জাসদ ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল জাসদ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, আরও বিভিন্ন সেক্টরে জাসদ ছাত্রলীগের নেতা পাওয়া যাবে খুঁজলে।
আগামী বিশ বছর পরে বিভিন্ন জায়গা নিয়ন্ত্রণ করবে এক্স-শিবির। তাদের চিনতেও পারবেন না। এখন থেকে নিজেদের যোগ্য লোক তৈরি করার উদ্যোগ না নিলে বিশ বছর পরেও শুধু কন্সপিরেসির এক্সকিউজ দেওয়া লাগবে।
লেখক: তরুণ আইনজীবী