স্টাফ রিপোর্টার ।।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর ও আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। সোমবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের নিজ বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মহিদুল ইসলাম জানান, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে উত্তরার পশ্চিম থানায় একটি হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। গত মার্চ মাসে মামলাটি রুজু হয়। মামলায় অভিযোগ রয়েছে, গত জুলাই মাসে গণ–অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থী তাকে অভিযুক্ত করেন। এখনো আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই মামলায় তুরিন ৩০ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি।

বেনজীর আহমেদ, মিজানুর রহমান ও শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সঙ্গে তুরিন আফরোজ
অভিযান পরিচালনার সময় উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম অংশ নেয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকেই তুরিন আফরোজের বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে নীলফামারী জেলাতেও একাধিক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে তিনি নীলফামারী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, সরকার পতনের আট মাসের মাথায় এ নিয়ে গ্রেপ্তার হলেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা ও আইনজীবী। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই একাধিক প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নীলফামারীতে গণসংযোগকালে তুরিন আফরোজ
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, গোলাম আজম, কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ আলোচিত মামলাগুলোর বিচারে নেতৃত্ব দেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ও মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়িয়েছেন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকও ছিলেন। ২০১৮ সালে তাকে প্রাথমিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল।

সর্বশেষ নির্বাচনে ক্রয় করা তুরিন আফরোজের মনোনয়ন ফরম।
তবে পরে তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে তাঁকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
তাঁর মায়ের দায়ের করা একটি পারিবারিক মামলাসহ একাধিক ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিতর্কে তিনি জড়িয়ে ছিলেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছেন।