স্টাফ রিপোর্টার ।।
ঢাকার প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, মোগল সুবাদার ইসলাম খান ১৬১০ সালে রাজধানী হিসেবে ঢাকার গোড়াপত্তন করেন। তবে সম্প্রতি পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত প্রাচীন নিদর্শনগুলো এই ধারণার পরিবর্তন করছে। প্রাপ্ত প্রমাণ অনুযায়ী, ঢাকায় বসতি শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় শতকের মধ্যে, অর্থাৎ এই জনপদের বয়স এখন প্রায় আড়াই হাজার বছর বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এশিয়াটিক সোসাইটির ‘ঐতিহ্য জাদুঘর’-এর ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন খননকাজের তত্ত্বাবধায়ক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, এই খননকাজে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো প্রমাণ করছে যে, ইসলাম খানের আগমনের আগেই ঢাকায় প্রাসাদ দুর্গসহ সমৃদ্ধ জনপদ ছিল।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, এই গবেষণার মাধ্যমে ঢাকা শহরের ইতিহাস নতুন মাত্রায় প্রকাশিত হলো। সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ২০১৭-১৮ সালে পাঁচটি স্থানে পরিচালিত খননকাজে কারাগারের আঙিনা, প্রাচীর, কূপ, মোগল আমলের ধাতব মুদ্রা, মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বেটা ল্যাবরেটরিতে কার্বন-১৪ পরীক্ষা করা হলে এসব নিদর্শন ১৪৩০ সালের বলে নিশ্চিত করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই প্রত্ননিদর্শন থেকে প্রমাণ হয় যে, ঢাকায় ইসলাম খানের আগমনের অনেক আগেই সমৃদ্ধ নগরী ছিল। খননে প্রাপ্ত গ্লেজড ও রোলেটেড মৃৎপাত্রের সন্ধান, যা মহাস্থান, উয়ারী বটেশ্বর, ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলেও পাওয়া যায়, প্রমাণ করছে যে এই জনপদ তখনকার বাণিজ্য রুটের অংশ ছিল।
সভায় বিশেষ অতিথি অধ্যাপক হাবিবা খাতুন বলেন, ঢাকার মোগল আমলের ঐতিহ্যের বাইরে এই শহরের প্রাচীন ইতিহাস আমাদের জন্য এক গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে।