হামীম কেফায়েত ।।
শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশের এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে পরিচিত নতুন কুঁড়ি, বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসে একটি স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মেধাবী শিশু-কিশোররা তাদের শিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য এবং অন্যান্য সৃজনশীল দক্ষতায় দেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছে।
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে নতুন কুঁড়ির যাত্রা শুরু হয়। এটি মূলত শিশু-কিশোরদের মেধা অন্বেষণের একটি সীমিত প্রচেষ্টা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭৬ সালে মুস্তাফা মনোয়ারের নেতৃত্বে এটি নতুন আঙ্গিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সম্প্রচার শুরু করে। অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয় কবি গোলাম মোস্তফার কিশোর কবিতা থেকে, যার প্রথম পনেরো লাইন প্রতিযোগিতার থিম সং হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

জিয়াউর রহমান
১৯৭০-এর দশকে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। সেই সময়ে নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানটি শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশের একটি মাইলফলক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তার শাসনামলে বিটিভির সম্প্রচারের সুযোগ ও মান উন্নয়নের কারণে নতুন কুঁড়ি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে যায়।
নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানের বিচারকার্য ছিলো ঐতিহাসিক সাক্ষ্যের মতো। দেশজুড়ে মেধার ভিত্তিতে তারকাদের জনপ্রিয়তা ছিলো এর সবচে বড় প্রমাণ । এর প্রধান বিচারকদের মধ্যে ছিলেন অনিল কিশোন সিনহা, যিনি শিশু-কিশোরদের প্রতিভা মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অনুষ্ঠানটি নির্মাণ ও পরিচালনায় মুস্তাফা মনোয়ার এবং কাজী কাইয়ুমের মতো গুণী ব্যক্তিত্বদের অবদান ছিল।
নতুন কুঁড়ি থেকে উঠে আসা প্রতিভাবানদের অনেকেই পরবর্তীতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। যেমন:
- তারানা হালিম – অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ।
- রুমানা রশীদ ঈশিতা – অভিনেত্রী ও গায়িকা।
- তারিন জাহান – খ্যাতিমান অভিনেত্রী।
- মেহের আফরোজ শাওন – অভিনেত্রী ও নির্মাতা।
- নুসরাত ইমরোজ তিশা – জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
- সামিনা চৌধুরী – সঙ্গীতশিল্পী।
- মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী এবং তমালিকা কর্মকার – নৃত্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী গান:
“আমরা নতুন আমরা কুঁড়ি নিখিল বন নন্দনে…”
শ্রোতা ও দর্শকদের অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করেছিল।
২০০৬ সালে নতুন কুঁড়ি বন্ধ হয়ে গেলেও এটি শিশু-কিশোরদের সৃজনশীল দক্ষতার প্রসারে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। এর মাধ্যমে উঠে আসা প্রতিভাবানরা আজও দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে।
নতুন কুঁড়ি শুধুমাত্র একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান নয়, এটি ছিল শিশু-কিশোরদের স্বপ্ন পূরণের মঞ্চ। এমন একটি অনুষ্ঠানের পুনর্জাগরণ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আরো সমৃদ্ধ করবে।