স্টাফ রিপোর্টার ।।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবারই মারা গেছেন ১০ জন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তাদের ব্যাখ্যা, বেশির ভাগ রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসায় মৃত্যুহার বেড়ে যাচ্ছে। শুরুতে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে অবহেলা করায় রোগ অনেক সময় জটিল আকার ধারণ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় (১৪৫ জন)। এরপর রয়েছে ঢাকা উত্তর (৪৭), বরিশাল (৪১), চট্টগ্রাম (২৫), রাজশাহী (১৬), ময়মনসিংহ (১২), খুলনা (৯), ঢাকার অন্যান্য এলাকা (৬) ও সিলেট (১)।
এ বছর এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৭৪ হাজার ৯৯২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান জানান, অনেক রোগী যখন হাসপাতালে আসেন, তখন তারা মারাত্মক সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকেন। এমন অবস্থায় অনেক সময় চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যায় না।

হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এক শিশু
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ রোগী ভর্তি হওয়ার পরপরই মারা যান। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় মৃত্যু তুলনামূলক কম।’ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গ বিকল হওয়া, গর্ভাবস্থা বা ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়ায়।
নাজমুল আহসান বলেন, ‘অনেকে সংকটাপন্ন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, আবার অনেককে বরিশাল, পিরোজপুর বা বরগুনার মতো জেলা থেকে দেরিতে রেফার করা হয়। প্রথম কয়েক ঘণ্টায় সঠিকভাবে তরল না দিলে অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যায়।’
তার মতে, ঢাকার দক্ষিণ অংশে মৃত্যুর হার বেশি কারণ এখানেই বেশি রেফার্ড রোগী আসে। এছাড়া ঢাকার বাইরে অনেক চিকিৎসক ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে ভুল হচ্ছে, যা অনেক সময় প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর কারণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক হোসেন বলেন, মৃত্যুহার কমাতে হলে আগেভাগে শনাক্তকরণ ও স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। ‘যদি মানুষ নিজের এলাকার কাছেই স্বল্প খরচে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে পারত, তাহলে অনেক মৃত্যু রোধ করা যেত,’ বলেন তিনি।
তিনি কোভিড-১৯ পরীক্ষার মতো কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেঙ্গু টেস্ট চালুর পরামর্শ দেন। সতর্ক করে বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণ না হলে মৃত্যুহার আরও বাড়বে।’