স্টাফ রিপোর্টার ।।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্বে থাকলেও প্রত্যাশিত সংস্কার ও রূপান্তর ঘটাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও চিন্তক ফিরোজ আহমেদ। তাঁর মতে, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশকে প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে ধাক্কা কাটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সামাল দেওয়া গেলেও এখনো দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও দঙ্গলবাজি বন্ধ হয়নি।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো আর্থিক খাতকে কিছুটা বাঁচানো এবং আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দেওয়া। তবে শিক্ষাখাতে দৃষ্টান্তমূলক বরাদ্দ কিংবা সম্পদ বণ্টনে সংস্কারের সাহস দেখানো হয়নি। বিদেশি সফটওয়্যার কেনার মতো প্রকল্পে অস্বচ্ছতা ও বিদেশ ভ্রমণের খরচ বাড়তি রাখা হয়েছে, যা পুরোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রাখছে।
তিনি মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি। তবে গণ–অভ্যুত্থানের তিনটি অর্জন স্পষ্ট—বুদ্ধিজীবী মহলের একটি বড় অংশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত গুন্ডাতন্ত্র ভেঙে পড়েছে এবং জনগণের আশা ও সাহস বেড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে আবাসনভাতা আদায়ে সাফল্য পেয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
অর্থনৈতিক অস্থিরতার দায়ও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপান ফিরোজ আহমেদ। তাঁর মতে, তারা ব্যবসায়ীদের আস্থা তৈরির কোনো উদ্যোগ নেয়নি। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো খাতে বিদেশি অপারেটরের হাতে টার্মিনাল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও প্রশ্নবিদ্ধ। এ অবস্থায় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে দ্বিধায় আছেন।
গণ–অভ্যুত্থানের পর দঙ্গলবাজি বেড়ে যাওয়ার বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন। তাঁর মতে, সরকার চাইলে সহিংসতা থামাতে পারত, কিন্তু তাদের মধ্যে এমন প্রভাবশালী মহল আছে যারা দঙ্গলবাজদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ৩২ নম্বর ভাঙচুরের ঘটনা তিনি দঙ্গলবাজির সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ভারত–পাকিস্তান–চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্যে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি বলেও মন্তব্য করেন ফিরোজ আহমেদ। সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশন ক্ষমতাকাঠামোর সংকটগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হলেও অনেক প্রশ্নে ঐকমত্য হয়নি। তবে আলোচনাকে ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
ফিরোজ আহমেদ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ সাহস অর্জন করেছে। শিক্ষার্থী ও তরুণদের আন্দোলনই আগামী দিনে দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।