স্টাফ রিপোর্টার ।।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজধানীর গুলশানে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন বলে নিশ্চিত করেছে দলের সূত্র। তিন বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং, লিভিং রুম ও সুইমিং পুলসহ সব আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই বাড়িটি গুলশান-২ এর গোলচত্বরের শেষপ্রান্তে অবস্থিত। লন্ডনে যাওয়ার আগে তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান বাড়িটি ঘুরে গেছেন। ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়ে থাকা শুরু করেন তারেক, এবং ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হলে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নেন। এখন জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি চূড়ান্ত হলে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
বাড়িটি মূলত বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সরকারের সময় দেড় বিঘা জমির ওপর খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে এতদিন বাড়িটির নামজারি সম্পন্ন হয়নি। অবশেষে ২০২৫ সালের ৪ জুন অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদা জিয়ার হাতে এর নামজারির কাগজ হস্তান্তর করে। একসময় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সিইও এই বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে থাকলেও ছয় মাস আগে তিনি সরে গেলে বাড়িটি সংস্কার করে তারেকের বসবাসের উপযোগী করা হয়। এই বাড়িটির পাশেই ‘ফিরোজা’ নামে খালেদা জিয়ার বর্তমান ভাড়াবাড়ি।
এর আগেও খালেদা জিয়া গুলশানের এই বাড়ির পাশাপাশি ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কে ৯ বিঘার আরেকটি বাড়িতে থাকতেন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন বিএনপি সরকার এবং ১৯৮২ সালে লে. জেনারেল এরশাদ সেনানিবাস ও গুলশানে তাকে দুটি বাড়ি বরাদ্দ দেন। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দুটি বাড়ি রাখাকে অনিয়ম উল্লেখ করে সেনানিবাসের বাড়ির ইজারা বাতিল করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, একজন রাজনীতিবিদের পক্ষে সেনানিবাসে থাকা সমীচীন নয় এবং শহীদ সেনা পরিবারের জন্য সেখানে ফ্ল্যাট নির্মাণে ওই জমির প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা আরও জানান, খালেদা জিয়াকে গুলশানে একটি বাড়ি দেওয়া হলেও তিনি সেনানিবাসের বাড়িটি আঁকড়ে ছিলেন এবং সেখান থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন। এমনকি সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুর অভিযোগ অনুযায়ী, ওই বাড়ির শর্ত লঙ্ঘন করে সেখানে রাজনৈতিক কাজ চালানো ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়। ব্যাংক ঋণের জন্য বাড়িটি বন্ধকও রাখা হয়েছিল। শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, সেনানিবাস বোর্ডের আইন লঙ্ঘন করে খালেদা জিয়াকে বাড়িটি দেওয়া হয়েছিল, আর সেই সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী এরশাদ।
হাসিনার বক্তব্যের পর জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও রংপুরে এক বক্তব্যে একমত পোষণ করে বলেন, ক্যান্টনমেন্টের মতো সংরক্ষিত এলাকায় রাজনীতি করা অনুচিত এবং নিরাপত্তার হুমকি হতে পারে। তিনি জানান, খালেদাকে সেনাবাহিনীর প্রধান থাকাকালীন সহানুভূতিশীল হয়ে তিনি বাড়িটি দিয়েছিলেন, কিন্তু জানলে যে সেখানে বসে রাজনীতি হবে, হয়তো সিদ্ধান্ত ভিন্ন হতো।
পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে সংসদীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি প্রশ্ন তোলে—১৯৮২ সালে সামরিক সরকার কীভাবে হস্তান্তর ফি ছাড়াই গুলশানের বাড়ি খালেদাকে দিল? তারা মন্ত্রণালয়কে অনিয়ম ব্যাখ্যার নির্দেশ দেয় এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে একাধিক প্লটপ্রাপ্তদের বরাদ্দ বাতিলের সুপারিশ করে।
২০০৯ সালে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করা হলে তিনি ভাই শামীম এস্কান্দারের বাসায় কিছুদিন ছিলেন এবং পরে ২০১২ সালে ‘ফিরোজা’তে ওঠেন। এরপর থেকেই গুলশানের সেই ভাড়াবাড়িতে থাকছেন খালেদা জিয়া, যেখানে এবার তারেক রহমান নিজেদের বাড়িতে ওঠার প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন।
