মু. শামসুজ্জামান ।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, ‘মেয়েদের সিগারেট খাওয়ার স্বাধীনতা নারীবাদ নয়।’ এটি নির্ভর করছে সমাজে আমরা নারীবাদ শব্দটিকে কীভাবে ব্যবহার করছি, সেটার ওপরে।
তিনি বলেছেন, কদিন আগেও রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে দেখি বেশ কয়েকজন মেয়ে একসঙ্গে সিগারেট খাচ্ছে। সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তারা যদি বলে, “ছেলেরা সিগারেট খেতে পারলে আমরা পারব না কেন?” আমার প্রথম কথা হচ্ছে সিগারেট খাওয়া জিনিসটাই একটি খারাপ অভ্যাস। ছেলেরা সিগারেট খেয়ে যে ভালো করছে, এমন না। এটা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু এখন মেয়েরা যদি ভাবে সিগারেট খাওয়া তাদের স্বাধীনতার প্রতীক, তাহলে সমস্যা। এগুলো ভুল বার্তা দেওয়া। স্বাধীনতা ও নেতিবাচক কাজ, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ কিংবা ছেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বর্বর কাজ করা নারীবাদের প্রতীক হতে পারে না। নারীবাদ এমন একটি আদর্শ যা সমাজে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলে। এটাকে মৌলবাদ অর্থাৎ “আমি যা করব, তাই ঠিক” এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ফলে সমগ্র আদর্শটা অনেকের কাছে নেতিবাচক মনে হয়।
আমাদের দেশের মূল সমস্যা, আমরা নিজেদের সংস্কৃতি থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছি। বিদেশি চ্যানেলগুলোতে, বিশেষ করে ভারতীয় টিভি, সিনেমায় যেভাবে নারী স্বাধীনতাকে দেখানো হয়, সেটা এক কথায় পুরো আদর্শটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা। এখন এই ভুলকে যদি আমাদের মেয়েরা অনুসরণ করে, তাহলে সেটা থেকে দুর্নাম আসবে, স্বাধীনতা না। আমরা গোড়ায় গোঁড়ামি করে, ওপরে ওপরে যে আধুনিকতার ধোঁয়া ওড়াচ্ছি, সেটিই নারীবাদ তামাশার একটি জায়গায় নিয়ে গেছে। (সময় নিউজ, মার্চ ১২, ২০২৩)
ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার লালমাটিয়া এলাকায় “প্রকাশ্যে ধূমপান” করার কারণে স্থানীয় বয়স্ক একজনের সঙ্গে ঝগড়ার পর দুই তরুণীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় ওই দুই তরুণীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই তরুণীকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

রমজানে প্রকাশ্যে নারীর ধুমপান।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ জানিয়েছে, রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় “প্রকাশ্যে ধূমপান” করছিলেন ওই দুই তরুণী। এতে বয়স্ক এক ব্যক্তির “আপত্তি” থেকে “বাগ্বিতণ্ডা” ও মানুষ জড়ো হয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। ৪০-৫০ জনের একটি “মব” থেকে পরে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই দুই তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে মোহাম্মদপুর থানায় প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের “দেন-দরবারে আপসের” পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই তরুণীকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওই দুই তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তারা ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা।
ওই দুই তরুণীকে মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে যান উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাদের আহমেদ। লালমাটিয়ায় আড়ংয়ের পাশের একটি চায়ের দোকানে এ ঘটনার সূত্রপাত জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চায়ের দোকানে বসে ওই দুই তরুণী চা ও সিগারেট খাচ্ছিলেন। তখন পাশ দিয়ে যাওয়া একজন বয়স্ক ব্যক্তি তাদের সিগারেট খাওয়া নিয়ে আপত্তি জানান এবং চলে যেতে বলেন। দোকানিকেও দোকান বন্ধ করতে বলেন। এ নিয়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে তরুণীদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির গায়ে চা ছুঁড়ে মারেন একজন। এখানেই শেষ নয়, চায়ের গরম কাপও ঐ বৃদ্ধের মুখের উপর ছুঁড়ে মারে, ফলে তিনি আহত হন বলে জানা যায়।”
পাবলিক প্লেসে ধূমপান রোধে ২০০৫ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ জারি হয়। এই আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষেধ। কেউ এ আইনের লঙ্ঘন করলে ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়ার কথা আছে। পাবলিক প্লেস বা জনপরিসর বলতে বোঝায় সড়ক, স্টেশন, টার্মিনাল, যাত্রীবাহি বাস ইত্যাদি। তারা যেখানে বসেছিলেন, সেটা জনউন্মুক্ত স্থান। টং দোকান কোনো গোপন কুঠুরি বা প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত জায়গা নয়। কথা হলো, মেয়েরা এমন একটি উন্মুক্ত স্থানে বিড়ি ফুঁকবে কেন? বিড়িখোর হলে তিনি কেন তার নিজ বাড়ীতেই পান করলেন না? সেখানে তো কেউ তাকে বাঁধা দিচ্ছে না। পাবলিক কেন তাদের বাঁধা দিলো আর সেটাই এখন দোষ হলো। মন্ত্রী কেন সেটার বিপক্ষে বললেন, এজন্য তার পদত্যাগ চাই। এমন স্বাধীন জাতিই আমরা!

মু. শামসুজ্জামান
যে মেয়েগুলো প্রকাশ্যে বিড়ি খেলো, তাদের চালচরিত্র কী? তারা কোন পরিবারে বিলং করেন? তাদের পিতা-মাতা কি তাদের কোনো আদব-কায়দা শেখাননি? এরকম নানা প্রশ্নই উঠতে পারে। আরো বিস্ময়কর যে তাদের পক্ষে যারা রাজধানীতে ঢোল বাজালেন, তাদের চরিত্র কী? অনেকেই তাদের ভিডিও দেখে থাকবেন। তারা কি কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে? এরা সমাজটাকে আর কত নিচে নামাতে চায়? আইনে বরং তাদেরই শাস্তি দেয়া উচিত, যারা স্বাধীনতার নামে প্রকাশ্যে এমন অশ্লীল বাক্য লিখে প্ল্যাকার্ড বহন করতে পারে? রোজার দিনে প্রকাশ্যে সিগারেট ফুঁকতে পারে?
লেখক : কবি ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার