স্টাফ রিপোর্টার ।।
বাংলা লিপির সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতার চর্চা এবং মানসম্মত টেক্সট টাইপফেসের সংকট নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে লিপিকলার প্রথম বর্ষপূর্তি ও ১২টি নতুন বাংলা ফন্ট উদ্বোধন করা হয়। ফন্টগুলোর মধ্যে ১০টি ডিজাইন করেছেন শিল্পী কাজী যুবাইর মাহমুদ, আর বাকি দুটি ডিজাইন করেছেন শিল্পী আজহার ফরহাদ ও শিল্পী স্বপ্নীল বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘লিপিকলা টাইপটক : ডিসকাসিং বাংলা টাইপফেস’। এতে অংশ নেন শিল্পী, গবেষক, টাইপফেস ডিজাইনার ও শিক্ষাবিদরা।
লিপিকলার ফাউন্ডার ও সিইও কাজী যুবাইর মাহমুদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি এক বছরে ১২টি টাইপফেস নিয়ে ১২টি বাংলা ফন্ট নির্মাণ করেছে, যেগুলো বাংলা লেখার দৃশ্যমান রূপকে নতুন মাত্রা দেবে। এগুলো লিপিকলার ওয়েবসাইট www.lipikola.com থেকে ক্রয়পূর্বক ব্যবহার করা যাবে।”

‘লিপিকলা টাইপটক : ডিসকাসিং বাংলা টাইপফেস’ অনুষ্ঠানে কথা বলছেন কাজী যুবাইর মাহমুদ
তিনি জানান, ফন্টগুলোর নাম রাখা হয়েছে বাংলা বছরের বারো মাসের নামে। এর আগে গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ‘দ্রোহ’ ফন্ট আন্দোলন ও পোস্টারে ব্যাপক ব্যবহার পেয়েছিল, সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বাংলা টাইপফেসের ঐতিহাসিক বিকাশ, অক্ষরের গঠনশৈলী ও ডিজিটাল যুগে টাইপফেসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
নিউএইজের ডেপুটি এডিটর আবু জার মো. আক্কাস বলেন, “বাংলা বই প্রকাশনায় মানসম্মত টেক্সট টাইপের অভাব বড় সমস্যা। অনেক ফন্ট বইয়ের জন্য উপযুক্ত নয়। টাইপ ডিজাইনাররা ডিসপ্লে টাইপে বেশি মনোযোগ দেন, অথচ দীর্ঘ বইয়ের টেক্সটের জন্য দরকার অন্য ধরনের ফন্ট।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, পুরনো হট মেটাল টাইপ সংরক্ষণ হয়নি বা ডিজিটালাইজ করা হয়নি।

‘লিপিকলা টাইপটক : ডিসকাসিং বাংলা টাইপফেস’ অনুষ্ঠানে দর্শকসারির একাংশ
আনিসুজ্জামান সোহেল বলেন, “অনেক ফন্টে যুক্তাক্ষরের সঠিক রূপ ঠিক থাকে না। এর ফলে পাঠযোগ্যতা কমে যায়।”
অন্য আলোচকদের মধ্যে ছিলেন—শিল্পী ও টাইপফেস ডিজাইনার আজহার ফরহাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মামুন অর রশিদ এবং অভ্র কিবোর্ডের জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত ফন্ট নির্মাতা তানবিন ইসলাম সিয়াম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিল্পী ও গবেষক ড. সিলভিয়া নাজনীন।
অনুষ্ঠানে লিপিকলার নতুন বারো ফন্ট উদ্বোধনের পাশাপাশি বাংলা লিপির কয়েকশ বছরের ইতিহাস, বিবর্তন ও নকশা নিয়ে একটি বিশেষ ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।