শনিবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৫

ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ঘুস হিসেবে ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক

টিউলিপ সিদ্দিকের আয়কর নথি ও নাগরিকত্ব প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করবে দুদক।

by ঢাকাবার্তা
টিউলিপ সিদ্দিক

স্টাফ রিপোর্টার ।।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগ এনেছে, তিনি ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ঘুষ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন। ২৪৩৬ বর্গফুট আয়তনের ওই ফ্ল্যাটটি (নং–বি/২০১) ‘ইস্টার্ন হারমনি’ ভবনের। দুদকের মামলার নথি অনুযায়ী, ২০০১ সালের ১৯ মে তিনি ফ্ল্যাটটি দখলে নেন এবং ২০০২ সালের ৩০ অক্টোবর নিজের নামে নিবন্ধন করান।

মস্কো সফরে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক, তার খালাতো ভাই সজীব ওয়াজেদ জয় ও খালা শেখ হাসিনা

মস্কো সফরে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক, তার খালাতো ভাই সজীব ওয়াজেদ জয় ও খালা শেখ হাসিনা

দুদকের অনুসন্ধান বলছে, ফ্ল্যাটটি পেতে টিউলিপ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব কাজে লাগান। ইস্টার্ন হাউজিং রাজউকের কাছ থেকে প্রকল্প অনুমোদন পেতে সমস্যায় ছিল। শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে সেই অনুমোদন আদায় করিয়ে দেন টিউলিপ। বিনিময়ে ফ্ল্যাটটি তাঁকে হস্তান্তর করা হয়। নথিপত্রে ফ্ল্যাটের দাম দেখানো হয়েছিল ৪৫ লাখ টাকার বেশি, যার মধ্যে গ্যারেজের দাম ধরা হয় ৬ লাখ টাকা। কিন্তু টিউলিপ কেবল গ্যারেজের আংশিক অর্থ পরিশোধ করেন, বাকি সম্পূর্ণ ফ্ল্যাট তিনি বিনা মূল্যে নিজের দখলে নেন।

  • টিউলিপ সিদ্দিক ২০০১ সালে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ঘুষ হিসেবে ফ্ল্যাট নেন
  • ফ্ল্যাটের দাম ছিল ৪৫ লাখ টাকা, পরিশোধ করেন কেবল গ্যারেজের আংশিক মূল্য
  • ২০০২ সালে নিজের নামে ফ্ল্যাট নিবন্ধন করান, পরে বোনের নামে হেবা দলিল করেন
  • দুদক বলছে, নোটারি নথি জাল এবং মালিকানা আড়ালের কৌশল
  • আয়কর বিবরণীতে ‘ব্যবসা/পেশা’ থেকে আয় দেখালেও প্রকৃত উৎস অস্পষ্ট
  • শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় আসামি টিউলিপ
  • টিউলিপের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে

পরবর্তী সময়ে টিউলিপ ফ্ল্যাটটির মালিকানা গোপন করার চেষ্টা চালান। ২০১৫ সালে তিনি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একটি হেবা দলিল তৈরি করে বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে ফ্ল্যাটটি দেখানোর চেষ্টা করেন। তবে দুদকের মতে, এই নোটারি নথি জাল এবং মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত মালিকানা আড়াল করা। এর আগে আদালতের নির্দেশে দুদক ফ্ল্যাটটি জব্দ করে।

টিউলিপের বিরুদ্ধে কেবল এই ফ্ল্যাট–সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগই নয়, রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে টিউলিপকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলার তিনটির অভিযোগপত্র ইতিমধ্যেই আদালতে জমা দিয়েছে দুদক।

এদিকে টিউলিপের বাংলাদেশি পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণও উঠে এসেছে। তাঁর নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ছাড়াও দীর্ঘ এক দশক ধরে বাংলাদেশে আয়কর প্রদানের তথ্য পাওয়া গেছে। কর বিবরণীতে তিনি ‘ব্যবসা/পেশা’ থেকে আয় দেখালেও প্রকৃত উৎস স্পষ্ট নয়। একবার মাছের ব্যবসার কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এসব তথ্যই এখন আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করবে দুদক।

তবে টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কুৎসা রটাচ্ছে। তাঁর মুখপাত্রও বলেছেন, এসব অভিযোগের পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিউলিপের আয়কর, টিআইএন নম্বর ও ব্যাংক লেনদেনের নথি যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই দায়ী। একই সঙ্গে এই ঘটনাকে যুক্তরাজ্য সরকারের জন্যও বিব্রতকর বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net