আহসান কবির ।।
বিবিধ কারণে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে আমার ‘বুজুর্গ’ লোক মনে হতো। এখনও হয়..! বুজুর্গের ব্যাখ্যায় পরে আসছি…
ক্ষমতার ‘ললিপপ” তাঁর খুব পছন্দ ছিল! তিনি ‘জানিপপ’ (জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ) দিয়ে পতিত সরকারের অন্তত তিনটি নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন..
রাতের ভোট কিংবা আমি ডামি ভোটকে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন বলেছিলেন, ব্যাঙের ছাতার মতো সাইনবোর্ড সর্বস্ব বিদেশি পর্যবেক্ষক দল এনে দেশ ভরিয়ে ফেলতেন, টাকা দিত রাষ্ট্র নামের গৌরি সেন..
জীবনকে তিনি ভোগ করতে শিখেছিলেন.. কয়েকটি রেকর্ড ছিল তাঁর। যেমন –
- রাত দুটো তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়া।
- বিমানে করে এসে টেলিভিশন টকশোতে উপস্থিত হয়ে আবার রাতেই ফিরতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
- একবার ৩৬৫ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ দিনও উপস্থিত ছিলেন না!
- তিনি নাচতে এবং নাচাতে পছন্দ করতেন। তার রাতের ‘ডিস্কো নাচের’ ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল!
- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকাকালীন তিনি একটি চলচ্চিত্রে পুলিশের আইজির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। গত আমলের সাবেক আইজি মামুন সাহেব রাজসাক্ষী হয়েছেন। সিনেমার আইজি কলিমুল্লাহ সাহেব সম্ভবত ততদূর যাবেন না…
শেখ হাসিনার পদলেহন করে নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার নামে তিনি ভিসি হয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন দীপু মনিকে তার ভালো লাগে নি । তিনি সরাসরি তার বিরোধিতায় নেমেছিলেন, দিপুমণিকে সামনে রেখে তিনি টকশোতে সরকার বিরোধী কথাবার্তা বলতে পছন্দ করতেন। তাঁর ‘বুজুর্গ গিরি’এখানেই। ড.ইউনুস সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার কারণে তার এই গ্রেফতারকে কেউ কেউ টকশোতে সরকারবিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে এমন ভাবতেই পারে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকাকালীন তিনি যে দুর্নীতি করেছিলেন এবং যা সে সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল সেটি আড়াল হয়ে যেতে পারে! বুজুর্গ হবার কারণে তিনি কিছুদিন ভেতরে থেকে সবার আগে মুক্তিও পেয়ে যেতে পারেন।
তার গ্রেফতার হবার একটা ভালো দিক এমন হতে পারে যে তাকে ঢালাওভাবে খুনের মামলায় গ্রেফতার করা হয় নি। জানি না তিনি কোন জেলখানায় থাকবেন। তার সাথে যদি গায়িকা মমতাজের দেখা হতো তাহলে মমতাজের বিখ্যাত গানের সাথে বুজুর্গ কলিমুল্লাহ সাহেব নাচতে পারতেন । সেখানে যদি শ্রদ্ধেয় আসাদুজ্জামান নূর থাকতেন তাহলে তার ভরাট গলায় কয়েদিরা কবিতা শুনতে পেতেন…
হায় আমার বাংলাদেশ …
‘সব শালা ভিসি হবে
বাচ্চারা গো ধরেছে ক্ষমতায় যেতে
রাজাকার নামের কিছু দাতাল শুয়োর
বসে আছে গোপনে শত ফাঁদ পেতে!’
(মূল কবিতা শ্রদ্ধেয় কবি মোহাম্মদ রফিকের)
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রম্য লেখক আহসান কবিরের ফেসবুক পোস্ট