যশোর প্রতিনিধি ।।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, এর আগে বা পরে কোনো ধরনের নির্বাচন হবে না। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তাতে স্বাক্ষর করা হয়েছে, বাকিগুলো সংসদে সমাধান হবে। তাই দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার বিকালে যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বানচাল করতে ষড়যন্ত্র করছে। তারা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং ফ্যাসিবাদের হাতের তলায় নিতে চাচ্ছে। দেশের জনগণ এটি কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
মহাসচিব বলেন, “অনেক শিশু ও সাধারণ মানুষের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আবার সেই স্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টাকারীরা মনে রাখুক, বিএনপি সহজে ভেসে আসা কোনো দল নয়। অনেক হামলা, মামলা, কারাভোগ ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি আজকে এই অবস্থানে এসেছে। বিএনপি জনগণের দল। দয়া করে পানি ঘোলা করবেন না, দেশকে অস্থিতিশীল করবেন না। যদি বিএনপি রাস্তায় নামে, তখন পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নেবে।”
সংস্কার কমিশনের কর্মকাণ্ডকে সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “৮৩ কোটি টাকা খরচ করে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সভা করেছে। আমরা প্রতিটি সভায় মতামত দিয়েছি। ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ প্লাজায় সকল দলের স্বাক্ষরে সংস্কারের প্রস্তাব পাস হয়। পরে উপদেষ্টামণ্ডলীর সভার পর আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘বাকি বিষয়গুলোর মীমাংসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের সময় দেওয়া হলো।’ মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের হাতের পুতুল।”
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণ করে ফখরুল বলেন, “ইতিহাসের এই দিনে জাতিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও জনগণ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দিয়ে রাষ্ট্রকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। এখনও যারা দেশকে ধ্বংসের চক্রান্ত চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
আগামী দিনের রাজনীতির আভাস দিয়ে মহাসচিব বলেন, “ফ্যাসিবাদের বিদায়ের পর দেশে গণতন্ত্রের সুযোগ এসেছে। এটিকে সত্যিকারভাবে প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের শপথ নিতে হবে—দেশকে আর কোনো আধিপত্যবাদের হাতে দেবো না, গণতন্ত্র হরণকারীদের হাতে দেবো না এবং পতিত ফ্যাসিস্টদের আর ফিরতে দেবো না।”
স্মরণসভাটি যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এবং কার্যত বড় ধরনের জনসভায় রূপ নেয়। এতে কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক টিএস আউয়ুব, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবিরা সুলতানা মুন্নি, আবুল হোসেন আজাদ, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল যশোর-৩ আসনের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলার ছয়টি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা উপস্থিত ছিলেন।