স্টাফ রিপোর্টার ।।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকা এবং পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল (স্থগিত) করার সিদ্ধান্তের কারণে দলটি এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এই অবস্থান তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন, অবৈধ অভিবাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা সংকট, এবং বিমান–নৌ খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
- নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত।
- কার্যক্রম স্থগিত ও নিবন্ধন বাতিল থাকায় আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
- যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন, অভিবাসন, রোহিঙ্গা ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ইস্যুতে আলোচনা।
- জুলাই সনদকে নতুন সূচনা হিসেবে উল্লেখ প্রধান উপদেষ্টার।
- রোহিঙ্গাদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও তরুণদের হতাশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ।
- নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের অঙ্গীকার।
- যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান–নৌ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আলোচনাও হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার এবার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। গত ১৬ বছরের স্বৈরতন্ত্রের সময়ে টানা তিনটি ‘কাটাছেঁড়া’ নির্বাচনের কারণে তারা ভোট দিতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশে একটি নতুন সূচনা তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান। তিনি রাজনৈতিক সংলাপ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে ইতিবাচক অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেন।

মুহাম্মদ ইউনূস ও জেনি চ্যাপম্যান
অভিবাসন ইস্যুতে চ্যাপম্যান বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রক্রিয়ার অপব্যবহার উদ্বেগজনক। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, তাঁর সরকার নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বৈধ পথে বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে কাজ করছে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে দুই নেতা মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। ইউনূস বলেন, ক্যাম্পে তরুণ রোহিঙ্গারা আশা হারিয়ে ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন, তাদের জন্য শিক্ষা সুযোগ বাড়ানো জরুরি।
এ ছাড়া বৈঠকে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা জানান, বঙ্গোপসাগর গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা জাহাজ কিনছে বাংলাদেশ। চ্যাপম্যান দুই দেশের বিমান যোগাযোগও আরও জোরদারের আহ্বান জানান এবং বলেন, এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই ঢাকা সফর করবেন।
বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারা কুক উপস্থিত ছিলেন।