স্টাফ রিপোর্টার ।।
সম্প্রতি আট দিনের সফরে আফগানিস্তান গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাতজন আলেম। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। সফর শেষে দেশে ফিরে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, আফগানিস্তান বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘প্রোস্পার আফগানিস্তান’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের উদ্যোগে এ সফরের আয়োজন করে। তাদের সমন্বয়ে প্রতিনিধি দলটি আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিতে সফরে যায়। তিনি জানান, সফরে তাঁরা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা আমির খান মুত্তাকি, পানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী মোল্লা আবদুল লতিফ মনসুর, শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী মোল্লা আবদুল মান্নানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

আফগানিস্তানের বিদ্যুৎ ও পানিমন্ত্রী মোল্লা আবদুল লতিফ মানসুরের সঙ্গে বৈঠকে মামুনুল হকসহ বাংলাদেশের আলেমরা
সাক্ষাৎকারে মামুনুল হক জানান, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে ইতিমধ্যে ৪১টি রাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। পাকিস্তান, ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে তাঁদের কূটনীতিক রয়েছে, তবে বাংলাদেশে এখনো নেই। তিনি বলেন, “তাঁরা আমাদের অনুরোধ করেছেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে যেন আমরা এ বিষয়ে কথা বলি। আফগানিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।”
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আফগানিস্তানের কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে মামুনুল হক জানান, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের বলেছেন, ওআইসির অধিবেশনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। আফগানিস্তান বাংলাদেশে কূটনীতিক পাঠাতে চায়, তবে এখনো কোনো জবাব পায়নি।
সফর নিয়ে তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানে তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি অল্প সময়ে পুনর্গঠনের পথে এগোচ্ছে। নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও ন্যায়পরায়ণ বিচারব্যবস্থার দিকগুলো তাঁদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে। তাঁর ভাষায়, “সেখানে ৫০ লাখ মানুষের হাতে অস্ত্র থাকলেও চার বছরে কোনো মারামারি বা রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি।”

আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বাংলাদেশের আলেমদের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল
নারী শিক্ষা প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, আফগানিস্তানের বিভিন্ন মন্ত্রীদের কাছে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, আপাতত মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা চালু আছে, উচ্চশিক্ষার জন্য আলাদা কারিকুলাম প্রস্তুত করা হচ্ছে। আফগান মন্ত্রীরা আশ্বস্ত করেছেন, নারীদের শিক্ষার সুযোগ শিগগিরই বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মামুনুল হক জানান, আফগান নেতারা ঘটনাটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাঁদের মতে, এর মাধ্যমে অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটেছে।
সবশেষে মামুনুল হক বলেন, তাঁদের সফরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কিছু নেই। “যখন আমেরিকা, ন্যাটো বা বড় রাষ্ট্রগুলো আফগানিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করতে পারে, তখন বাংলাদেশি আলেমদের সফর নিয়েও প্রশ্ন তোলা যুক্তিসঙ্গত নয়।”