শনিবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: ছাত্র-আন্দোলনের স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু

১ জুলাই শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় ৫ আগস্ট; কোটাব্যবস্থা সংস্কার থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলা—এক বছরে পাল্টে যায় বাংলাদেশের রাজনীতির ধারা।

by ঢাকাবার্তা
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ফাইল ফটো

স্টাফ রিপোর্টার ।।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হলো। দিনটি স্মরণে চলছে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানমালা’। একইসঙ্গে এক বছর আগে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নানা কর্মসূচিতে সরব হয়ে উঠেছে রাজনীতি ও সামাজিক পরিসর। ১ জুলাই ২০২৪-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় পরিসরে সংগঠিত হয় কোটা সংস্কার দাবিতে ছাত্রদের ঐতিহাসিক আন্দোলন। ওইদিন সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নিয়ে মিছিল বের করেন, যা রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়। সমাবেশ থেকে জানানো হয়, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারকে কোটাব্যবস্থার বিষয়ে আইনি সমাধানে পৌঁছাতে হবে। এ দাবিতে ১ থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম (বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক)।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় গ্রন্থাগার ও আবাসিক হল খোলা রাখতে হবে, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। তিনি প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করলেও শিক্ষার্থীদের জীবনযাপনের সুবিধা যেন বন্ধ না হয়, সেজন্য হুঁশিয়ারি দেন। ২, ৩ ও ৪ জুলাই প্রতিদিন শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলন শুধু ঢাকা নয়, ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাহাঙ্গীরনগরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ হয়, রাজশাহী ও বাকৃবিতেও হয় মানববন্ধন-বিক্ষোভ। শিক্ষার্থীদের মূল দাবি ছিল, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিল ঘোষণা করা হোক এবং ভবিষ্যতে যদি কোটা নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে তা কমিশনের মাধ্যমে হোক, যাতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল থাকে।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ফাইল ফটো

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ফাইল ফটো

৫ জুন হাইকোর্টের রায়ে কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তের পরই ঢাবিতে শুরু হয় আন্দোলন, যার নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বাকের মজুমদার (বর্তমানে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক)। তিনি জানান, ১ জুলাই দেশে ১১টি জায়গায় একযোগে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়। এর বাইরে আরও কিছু এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একই দাবি ওঠে। এটি ছিল সংগঠিত ছাত্র-আন্দোলনের সূচনা। ৫–৯ জুন প্রতিবাদ ও ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারের প্রতি সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পর ১ জুলাই থেকে দেশজুড়ে সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা ছিল বলেও জানান তিনি।

এদিকে ১ জুলাই থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানমালা’ শুরু হয়েছে। এই অনুষ্ঠান চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। ১ জুলাই শহীদদের স্মরণে দেশজুড়ে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় দোয়া ও প্রার্থনা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’। শুরু হয়েছে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও, যা চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। একই দিনে চালু হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুলাই শহীদ শিক্ষাবৃত্তি’। এসব কর্মসূচির সূচনা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ফাইল ফটো

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ফাইল ফটো

অনুষ্ঠানমালার অন্যান্য দিনগুলোতে রয়েছে ৩৬ জুলাই স্মরণে ভিডিও শেয়ারিং, ৩৬ জেলার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বিজয় মিছিল, ড্রোন শো, গান, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং এয়ার শো। মূলত গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এই ‘জুলাই বিপ্লব’ পরিপূর্ণতা পায়।

এই আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কার নয়, এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক রূপান্তরের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যার প্রেক্ষিতে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার এবং ছাত্র-জনতার সম্মিলিত রাজনৈতিক প্রত্যয়ের প্রকাশ ঘটে গোটা জুলাই মাসজুড়ে।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net